এবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার বন্ধের পাশাপাশি ওই
পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিচারের দাবি সংসদে তুলেছেন সরকারি দলের
কয়েকজন সংসদ সদস্য।
রোববার সংসদ অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে
আওয়ামী লীগের ফজলে নূর তাপস সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে
বানোয়াট খবর প্রকাশের জন্য দৈনিকটি বন্ধের দাবি তোলেন।
এরপর আওয়ামী লীগের শামসুল হক টুকু, ওয়ারেসাত হোসেন
বেলাল, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নূর জাহান বেগম, জাসদের মইনুদ্দিন খান
বাদল, স্বতন্ত্র হাজি সেলিমও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তাদের বক্তব্যে ডেইলি স্টারের সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে
মাহফুজ আনামের পদত্যাগের আহ্বান আসে; দৈনিকটির অন্যতম মালিক লতিফুর
রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও আসে।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ‘ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা’ ‘শেখ হাসিনার
বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই ছাড়া প্রকাশের ‘ভুল’ ডেইলি স্টার সম্পাদক
মাহফুজ আনাম স্বীকার করার পর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার গ্রেফতার দাবি
করেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
জরুরি অবস্থার সময় বন্দি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল
করিম সেলিমের ‘স্বীকারোক্তি’তে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এসেছিল বলে
কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি ছাড়াই প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের ভাতিজা
ঢাকার সংসদ সদস্য তাপস সংসদে এই আলোচনার সূত্রপাত করে বলেন, “সত্যতা যাচাই
করা ছাড়াই তিনি (মাহফুজ আনাম) সকল বানোয়াট খবর অকপটে ছাপিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, তার
প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য মাহফুজ আনাম তার পত্রিকা ডেইলি স্টারে ডিজিএফআইর
দেওয়া বানোয়াট আর দুর্নীতির গল্প সাজানো যে সংবাদ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো
ছাপিয়েছে।’
সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে মিথ্যা খবর সাজানো গল্প
ছাপানোর দায়িত্ব স্বীকারের পর মাহফুজ আনামের পদত্যাগ দাবি করে তাপস বলেন,
“তার সম্পাদক থাকার আর কোনো অধিকার নেই। পেশাকে অমর্যাদা করার জন্য তাকে
বহিষ্কার করতে হবে।”
সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে ব্যারিস্টার তাপস
বলেন, ‘তার কার্যক্রমগুলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। রাষ্ট্রদ্রোহ
মামলা এনে তার বিচার করার দাবি করছি।’
জাসদ নেতা বাদল বলেন, ‘মিস্টার মাহফুজ আনাম আপনি
শিক্ষিত লোক। বিচার হওয়ার আগেই বাংলাদেশের নেত্রীকে আপনি বিচারের কাঠগড়ায়
দাঁড় করিয়েছেন। প্রথমেই আপনার পদত্যাগ করা উচিত। এভাবে তো থুক্কু (ভুল
স্বীকার) বলে পার পাওয়া যায় না। যদি মনেই করেন আপনি অপরাধ করেছেন, তাহলে
আপনি পদত্যাগ করেন, প্রায়শ্চিত্ত করা বাঞ্ছনীয়।’
আওয়ামী লীগের বেলাল বলেন, ‘একজন প্রকাশক কীভাবে
সাংবাদিকতাকে আজকে কলঙ্কিত অধ্যায়ে পরিণত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ...১/১১ এর
সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অযাচিত বক্তব্য, অযাচিত কার্যকলাপ
তিনি করেছেন...সেনাবাহিনীর গুটিকয়েক অফিসার যে নীলনকশা করেছিলে, সেগুলো
তারা ঢালাওভাবে ছাপিয়েছে। এধরনের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের
সোচ্চার হতে হবে। এরা যেন সাংবাদিকতায় থাকতে না পারে সেজন্য জাতির সমানে
এদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে।”
আওয়ামী লীগের স্বপন বলেন, ‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা
বিষাদে... মাহফুজ আনাম সাহেব স্বীকার করলেন, তিনি তার পত্রিকায় মিথ্যা
সংবাদ পরিবেশন করেছেন। সম্পাদক দায়ী হলে মালিক ও প্রকাশক দায়ী নয়, এটা
ভাবার অবকাশ নেই। বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের জন্যই এই ষড়যন্ত্র।’
সংরক্ষিত আসনের নূর জাহান বেগম বলেন, “অপরাধী যখন দোষ
স্বীকার করেছেন, তখন প্রমাণের দরকার নেই। উনি স্বীকার করে খাল কেটে কুমীর
এনেছেন। অতএব এখান থেকে পেছনে ফেরার উপায় নেই। তিনি রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা
নিয়ে কথা বলেন। তিনি যা করেছেন, সেটা নৈতিকতা বিরোধী। অনৈতিক কাজ করার জন্য
সাংবাদিক থাকার অধিকার হারিয়েছেন। আমি তার গ্রেপ্তার দাবি করছি।’