পৃষ্ঠাসমূহ

কবিতা

সৈয়দ শামসুল হক
জগন্নাথ হল

দুলে উঠছে ফুলের অজস্র পতাকা
উধাও ছাত্রদের মাঠে
ঘাসের বেয়োনেটগুলো আকাশের দিকে স্থির
পাশেই
ছিন্ন একটা স্তনের বোঁটা মুখে
সমস্ত নিস্তব্ধতায়
দীর্ঘ ছায়া ফেলে
সৈনিক
সূর্যাস্তের প্রতিফলন তার দাঁতে



আল মাহমুদ
ক্যামোফ্লাজ

নিজেকে বাঁচাতে হলে পরে নাও হরিৎ পোশাক
সবুজ শাড়িটি পরো ম্যাচ করে, প্রজাপতিরা যেমন
জন্ম-জন্মান্তর ধরে হয়ে থাকে পাতার মতন।
প্রাণের ওপরে আজ লতাগুল্ম পত্রগুচ্ছ ধরে
তোমাকে বাঁচতে হবে হতভম্ব সন্ততি তোমার।

নিসর্গর ঢাল ধরো বক্ষস্থলে
যেন হত্যাকারীরা এখন
ভাবে বৃক্ষরাজি বুঝি
বাতাসে দোলায় ফুল
অবিরাম পুষ্পের বাহার।

জেনো, শত্রুরাও পরে আছে সবুজ কামিজ
শিরস্ত্রাণে লতাপাতা, কামানের ওপরে পল্লব
ঢেকে রেখে
নথ
দাঁত
লিঙ্গ
হিংসা
বন্দুকের নল
হয়ে গেছে নিরাসক্ত বিষকাটালির ছোট ঝোঁপ।

বাঁচাও বাঁচাও বলে
এশিয়ার মানচিত্র কাতর
তোমার চিৎকার শুনে দোলে বৃক্ষ
নিসর্গ, নিয়ম।


শহীদ কাদরী
ব্লাক আউটের পূর্ণিমায়

একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ
আমার কনিষ্ঠ আঙুলে, কখনও উদ্ধত তলোয়ারের মতো
দীপ্তিমান খামের বিস্তারে, দেখেছি তোমার ডোরাকাটা

জ্বলজ্বলে রূপ জ্যোৎস্নায়। তারপর তোমার উন্মুক্ত প্রান্তরে
কাতারে কাতারে কত অচেনা শিবির, কুচকাওয়াজের ধ্বনি
যার আড়ালে তুমি অবিচল, অটুট, চিরকাল।

যদিও বধ্যভূমি হলো সারাদেশ— রক্তপাতে আর্তনাদে
হঠাৎ হত্যায় ভরে গেল বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর
অথচ সেই প্রান্তরেই একদা ধাবমান জেব্রার মতো

জীবনানন্দের নরম শরীর ছুঁয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বাতাস রয়েছে।
এখন সেই বাতাসে শুধু ঝলসে যাওয়া স্বজনের
রক্তমাংসের ঘ্রাণ এবং ঘরে ফিরবার ব্যাকুল প্ররোচনা।

শৃংখলিত বিদেশীর পতাকার নীচে এতকাল ছিল যারা
জড়োসড়ো, মগজের কুণ্ডলীকৃত মেঘে পিস্তলের প্রোজ্জ্বল আদল
শীতরাতে এনেছিল ধমনীতে অন্য এক আকাঙ্ক্ষার তাপ।

আবাল্য তোমার যে নিসর্গ ছিলো নিদারুণ নির্বিকার,
সুরক্ষিত দুর্গের মতন আমাদের প্রতিরোধে সে হলো সহায়,
ব্লাক আউট অমান্য করে তুমি দিগন্তে জ্বেলে দিলে
বিদ্রোহী পূর্ণিমা।আমি সেই পূর্ণিমার আলোয় দেখেছি
আমরা সবাই ফিরছি আবার নিজস্ব উঠোন পার হয়ে নিজেদের ঘরে।


রফিক আজাদ
সৌন্দর্য— সৈনিকের শপথ প্যারেড

ট্রিগারে আঙুল রেখে, পুনর্বার, বুঝে নিতে চাই
অধিনায়কের কণ্ঠে উচ্চারিত গাঢ় শব্দাবলী,
শপথ-প্যারেড : ‘তোমাদের মনে রাখা প্রয়োজন
এই যুদ্ধ ন্যায় যুদ্ধ; বিশ্বাসঘাতক নয়, আজ
সৌন্দর্যের প্রকৃত প্রেমিক চাই; তোমাদের কাজ
নয় মোটে সাহজিক। আনন্দের রক্ষণাবেক্ষণ
অত্যন্ত দুরুহ কর্ম— অনেকের ঘটে অন্তর্জাল।
সত্যের বিরুদ্ধে নয়, আজীবন সপক্ষে লড়াই।’’

জলপাই-রঙ য়্যুনিফর্ম, সবুজাভ হেলমেটে,
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত সৈনিক আমি, কর্মরত।
সৌন্দর্যের রাজধানী ঘিরে অসংখ্য বিরোধী বীর
অবস্থান নেয়, সুবিধাজনকভাবে একচেটে
আছে যার শিল্পরুচি, তাকে প্রয়োজন— ব্যক্তিগত
কিংবা সার্বজন্য হরিষে বিষাদে— যে জন সুস্থির।



নির্মলেন্দু গুণ

স্বপ্ন, নব-ভৌগোলিক শিখা

এখন আমার বয়স কত হবে? একশ? নব্বই? আশি?
হায়রে আমার বেশি-বয়সের স্বপ্ন, আমার একশ হবে না ।
আমি ময়মনসিংহের কবি, নীরার একান্ত বাধ্য স্বামী,
আমার বয়স পঁয়ত্রিশ, আমি ঢাকায় এসেছি স্বরচিত
কবিতা পড়তে । আমার বড় ভাই পশ্চিম বাংলার,
আমি স্বদেশের মায়ায় জড়ানো কবি ।

আয়াতুল্লা খোমিনির মতো আমার মাথার চুলে ব্রহ্মজীবী
শুভ্র-কাশদল, ফাল্গুনের হাওয়ায় মাতাল শাল-গজারীর
সবুজ পাতার ঝিলিমিলি আমার দু`চোখে ।
আমার দু`হাতে ধর্ম, দাঙ্গা,
আর প্রলম্বিত সামরিক শাসনের কালো শৃঙ্খলের দাগ ।
পায়ে এঁটেল মাটির মায়া, বুকে প্রিয়-নিধনের ক্ষত ।
আমি মেঘের আড়ালে ইন্দ্রজিৎ, আমি জন্মযোদ্ধা ।
আমি যুদ্ধে-যুদ্ধে, বিপ্লবে-বিপ্লবে...,আমার পেছনে দগ্ধ
ইতিহাসের ট্রাজিক উল্লাস; তবু জানি আমার সম্মুখে আছে
পৃথিবী কাঁপানো স্বপ্ন, আছে নব-ভৌগোলিক শিখা ।

আমার বয়স যখন বাড়বে, তখন প্রতিটি সূর্যোদয়ে
সূর্যমুখীর মতন একটি-একটি ক`রে পাপড়ি মেলবে
আমার প্রতিটি কবিতার ভিতর-বেলার বর্ণ ।

আজ যে আঙুরগুলো আমি মাটির ভিতরে পুঁতে রেখে যাচ্ছি,
একদিন তার নেশায় মাতাল হবে ভবিষ্যতের বাংলা আমার ।
তখন আমার বয়স কত হবে?


শামসুর রাহমান
গেরিলা

দেখতে কেমন তুমি? কী রকম পোশাক-আশাক
পরে করো চলাফেরা? মাথায় আছে কি জটাজাল?
পেছনে দেখাতে পারো জ্যোতিশ্চক্র সন্তের মতন?
টুপিতে পালক গুঁজে অথবা জবরজং, ঢোলা
পাজামা কামিজ গায়ে মগডালে এক শিস দাও
পাখির মতোই কিংবা চা-খানায় বসো ছায়াচ্ছন্ন?

দেখতে কেমন তুমি? অনেকেই প্রশ্ন করে, খোঁজে
কুলুজি তোমার আঁতিপাঁতি। তোমার সন্ধানে ঘোরে
ঝানু গুপ্তচর, সৈন্য, পাড়ায় পাড়ায়। তন্ন তন্ন
করে খোঁজে প্রতিঘর।পারলে নীলিমা চিড়ে বের
করতো তোমাকে ওরা, দিত ডুব গহন পাতালে।
তুমি আর ভবিষ্যৎ যাচ্ছো হাত ধরে পরস্পর।

সর্বত্র তোমার পদধ্বনি শুনি, দুঃখ-তাড়ানিয়া :
তুমি তো আমার ভাই, হে নতুন, সন্তান আমার।


হাসান হাফিজুর রহমান
এখন সকল শব্দই

আমার নিঃশ্বাসের নাম স্বাধীনতা
আমার বিশ্বাসের নখর এখন ক্রোধের দারুণ রঙে রাঙানো
দুঃস্বপ্নের কোলবন্দী আমার ভালোবাসা
এখন কেবলই
এক অহরহ চিৎকার : হত্যা কর, হত্যা কর, হত্যা কর।

হীনতম বিভীষিকার কালো দাগে মোড়া
বাংলার
গর্জমান বাতাস এখন আর কিছু বোঝে না।
এখন সকল শব্দের একটিই মাত্র আওয়াজ :
                   অবিনাশী হুঙ্কার।



হুমায়ুন কবির
লাল বলের মতো গ্রেনেড

শৈশবের লাল বল, অবহেলে ছুঁড়ে দিচ্ছে গ্রেনেড
স্বয়ংক্রিয় বন্দুক বাজছে মাউথ অর্গানের উজ্জ্বল সুরের মত
শস্যের সবুজ যবনিকার মাঝখানে, দাদী আম্মার
শান্ত পল্লীতে, সোনালী মিনার ঘেরা
শহরের আলোয় আলোময স্ট্রিটে
হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে, শত্রুদের প্রতি অমায়িক
দাওয়াৎ তুলে দাও, ছোঁড় লাল বলের মত গ্রেনেড।
কমলা কোয়ার মত ছড়াও ম্যানশনের খোসা
মাননীয় মেজর ও মন্ত্রীদের গাড়ি বিস্ফোরকে কেমন ওড়াও।
সবুজ গর্ত শির উঠেছে আকাশে
জননীর ভালবাসা শিরস্ত্রাণ সঙ্গে নিয়ে আছো
গোলরক্ষকের মত সাবলীল লুফছো মৃত্যুকে
প্রসন্ন ভোরের হাসি তুলে নাও ঠোঁটে
ফুস ফুস বিদ্ধ করে আততায়ী বুলেট যখন।



আবুল হাসান
উচ্চারণগুলি শোকের

লক্ষ্মী বউটিকে আমি আজ আর কোথাও দেখি না,
হাঁটি হাঁটি শিশুটিকে কোথাও দেখি না;
কতগুলি রাজহাঁস দেখি,
নরম শরীর ভরা রাজহাঁস দেখি
কতগুলি মুখস্ত মানুষ দেখি, বউটিকে কোথাও দেখি না
শিশুটিকে কোথাও দেখি না।

তবে কি বউটি রাজহাঁস
তবে শিশুটি আজ সবুজ মাঠের সুর, সবুজ আকাশ?

অনেক যুদ্ধ গেলো
অনেক রক্ত গেলো,
শিমুল তুলোর মতো সোনা-রূপো ছড়ালো বাতাস।

ছোটো ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,
নরম নোলক পরা বোনটিকে আজ আর কোথাও দেখি না।

কেবল পতাকা দেখি,
কেবল পতাকা দেখি,
স্বাধীনতা দেখি!

তবে কি আমার ভাই আজ ঐ স্বাধীন পতাকা?
তবে কি আমার বোন, তিমিরের বেদীতে উৎসব?

 
তোমার চোখ এতো লাল কেন
নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাইকেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?

(কবিতাটি অনলাইন থেকে সংগৃহীত)
 ..........................................................................
কোথাও যেতে পারিনি
               -সিরাজুজ্জামান

পাখিগুলো দিগন্ত রেখায় মিলিয়ে যেতে না যেতেই
পালকে ভরে গেল নিচের সমস্ত শান্ত সবুজাভ মাঠ।

এখনও নদীর স্রোতে শরীর ভাসিয়ে আনন্দ করবে
উঞ্চ জলে স্থান পেয়েছ বলে?

আমার তো কোথাও ঠাঁয় হল না, যাওয়া হল না
দিগন্তের ওপারের বনে।

চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখে পাখিগুলোর
ওরা স্বপ্ন ও সুখ খেলো, পালক নিল।

তোমার মনের মধ্যে কোনো খেদ ও অতৃপ্তি নেই
কারণ ভাগ্যে একটু জল জুটেছে বলে।

.......................................................
ডুবে ডুবে জল খাওয়া
         -সিরাজুজ্জামান


তুমি কখনও কণ্ঠহারে আবৃত থাকো না মুক্তমঞ্চে
সোনালি রূপালি আলোর নিচে উন্মুক্তও না
তবুও তোমার ছায়া বিবস্ত্র বেশে প্রতিটি নদীর জলে
কারণ তুমি ডুবে ডুবে জল খাও।

হাতে তজবি নিয়ে সারাদিন বিড় বিড় করে কী চাও?
প্রচারনা চালিয়ে ঘুরেও এসেছ পশ্চিমের দেশ
হিংসা লোভ লালসায়  চারদিকে যেভাবে ঘুমায়িত 
তাতে তোমার তজবিতে শুধুই চাই আরো চাই
চারদিকের সুন্দর অসুন্দর যা পাই সবই খাই।
 .......................................................
সুখের সন্ধানে
        -মাহমুদ হাসান

সনাতন গৃহ, বিষয়-আশয় সব এখন উপবাসের পাখি।
ভুল করে ডুব দেয় পাখি মায়াবী জলে, জাগে বাতাস
রূপালি মাছ হয়ে যায় পাখি।

নিটোল শরীর লুকোয় বিষবৃতক্ষের মূলে,
সনাতন গৃহলক্ষ্মীর সাক্ষাত পায়না নিঃসঙ্গ পথিক।
ভিনদেশী জাহাজ খোঁজে বসন্তের দ্বীপ
উপবাসী পাখি, যার মেলানো ডানায় মিশে আছে
কতো রাত্রির পূর্ণিমা। দীঘির শীতল জলে অবিরাম
খেলা করে রূপালি মাছের ঝাঁক-

কোথাও পায়না সন্ধান হায়! ভেসে বেড়ায়
রৌদ্রময় ডানার শব্দের মতো ভিনদেশী জাহাজ।
উপবাসী পাখির দু'চোখে ভাসে বসন্তের দ্বীপ
যেন কতো শতাব্দীর প্রাচীন জলতরঙ্গনারী,
পায়না সন্ধান তার-

ভাসে বসন্তদ্বীপ! ভাসে ভিনদেশী জাহাজ!
কামানের গোলার মতো লাল সূর্য ডুবে গেলে
সফেন সমুদ্রের জলে নামে সাঁঝের আঁধার ।
 ...............................................................

শূন্যকাপ
            -সিরাজুজ্জামান
            
            শূণ্যকাপে ধন্য ঠোঁট বিগলিত হাসি মাখে
            বার বার চুমুক দিয়েও আসে না কিছু
            তবুও তোমার দিকে তাকিয়ে সে আশায় আশায়।


            অভিনয় টুকুও হোঁচট খায় এত বড় শূন্যতার গোহায়
            একেবারে কিছু না থাকলে কি জল জন্ম হয়?

            শূণ্যকাপের তাপে ঢেউ খেলে যায় সুনামির মতো
            আশপাশের সবকিছু আছড়ে পড়ে হুড়মুড়িয়ে।
           
            তারপর ঘোরটুকু উধাও হলে
            ঠোঁটের রক্তে ভেসে যায় সবটুকু শূন্যতা
            কিন্তু পাশেই পড়ে থাকে রক্তহীন মানুষগুলো।

            সিরাজুজ্জামান: সাংবাদিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
 ...........................................................................

কৃত্রিম পা দৌড়াচ্ছে
   - ফয়সাল মামুদ পল্লব
(উৎসর্গ: র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনকে)

একটি মসৃন রাস্তা আছে
কিন্তু একটা পা নেই আমার-
চলতে ফিরতে পারছি না।
দাড়িয়ে পরেছি আমি।

দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিন
স্বপ্নে দেখেছিলাম
এক জোড়া কৃত্রিম পা- দৌড়াচ্ছে।
মাঠ পেরিয়ে দিগন্তে দিগন্তে।

তখন আমি স্থির ছিলাম।
সন্ধ্যার অচেনা পাখির ডাকে
আমি ছিলাম অচেতন।
সেই সময়, যখন
এক জোড়া কৃত্রিম পা দৌড়াচ্ছিলো দিগন্তে দিগন্তে।

বিচ্ছিন্ন পায়ের অসহয়াত্বকে দূরে ঠেলে
হাওয়ার সন্ধানে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম
আর ওই একজোড়া কৃত্রিম পা- দৌড়াচ্ছিলো না
এখন একটি কৃত্রিম পা অদ্ভুত বিষকাতর হয়ে
আমার শরীরে ঝুলে আছে-সারাক্ষণ।
.....................................................


শামীমুর রহমানের গান

TumiDashratnoShekHasina
BolsiMuktiJoddahader 
ToraNauBaiaJa 
ChariDikaShobujerGhera 
ShekMujiberGan 
GorjeyOthoBangali 
IaslaAseniotoJehade 
JodiRatPohatai 
JoyAsecy 
KadoBangali 
............................................
পূর্ব পুরুষ
সিরাজুজ্জামান

সোভিয়েট পত্রিকার মসৃণ পাতা কেটে
যে তোমার বইয়ের মলাট করে দিত
েেতর আল ধরে হাঁটার সময় তাঁরই ছাতা
কোমল মাথার উপর ছিল পরম মমতায়।

তাঁর অর্ন্তধান বেলায় তুমি পাশেও ছিলে না।

এমনকি তোমাকে জানানোও হয়নি যে
পূর্ব পুরুষ আর নেই।
তারা কি ধরেই নিয়েছিল তাঁর চলে যাওয়ায়
তোমার কিছু যায় আসে না!

এখনও তাঁর ঘুম ভাঙ্গে না কেন?
জেগে উঠে কেন তাঁর পথভ্রান্ত রক্তকে
টানে না কাছে?

তোমার জন্য রেখে যাওয়া নির্ভরতার শ্রমগুলো
নিঃশেষ করেছে ওরা বাতাসে ছাই উড়ানোর মতো।
এখন তুমি শুধু নিঃসঙ্গই নয়
পিরাপত্তাহীনতার আবর্তে বন্ধী একজন।


সিরাজুজ্জামানঃ সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিন



কবি বন্দে আলী মিয়াকে লেখা রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠিঃ






















তার চেয়ে
    শামীম আরা চৌধুরী

যে জলে ভাঙনের গান নেই
সে জল তো জলই নয়, প্রিয়
তুমি কি জল ভালোবাসো?
চোখের জল?
সে-তো বেহুলার
শাড়ীর ফুরফুরে আঁচল
কেন?
কেন তুমি সে আঁচলে নিজেকে বাঁধো?
বলো?

তার চেয়ে-
চলো বসন্তের আকাশে আগাম স্বপ্নের অস্ত্র সানাই,
ভাঙনের ভাজে যা কিছু আছে চাপা পড়ে থাক ।
তার চেয়ে-
বলো না বলা যা আছে জীবনের সমারোহে,
খরতাপে যদি জ্বলে পুড়ে কিছু খাঁক হয়, হয়ে যাক ।

............................................................
কাঙাল জন্ম
       শামীম আরা চৌধুরী

আর কতোকাল এ অজগরের মতো চলা
আর কতো নস্ট কীট আমি ভক্ষণ করবো
এভাবে একাকী ।
তোমার আলিঙ্গণ থেকে বহুদুরে
অন্ধকারে বেঁচে রবো
পেঁচার চোখের মতো দীর্ঘরাত ।
ভুলে যাবে আমাকে তুমি,
ঠিক যেমন করে ভুলে নদীর আকর্ষণে
চলে যাওয়া ভিটে মাটি ।
পৃথিবীর অক্ষরেখায় আকাশে তারা গুনতে
মুলত আমার যাত্রা শুরু ।
সে যাত্রা আর যেন না থামে
কোন বিলাসী বৃষ্টির ভুমি ধ্বসে
পাহাড় ধ্বসে মমি হয়ে যাওয়া
কাঙাল জন্মের মতো ।

................................................


ইন্দু বিন্দু সিন্ধু
    -ফয়সাল মাহমুদ পল্লব

বিন্দু বিন্দু জলকণা
    ছোট্ট ছোট্ট সূর্য রশ্মি
বিশাল রঙধনু হয় ঊর্বশী।

অসংখ্য জলতরঙ্গ
    বিন্দু বিন্দু জলকণা
তৈরি জলরাশি, রাশি-রাশি।
আসলে তা-
শুক্রানু-ডিম্বানুতে মিশামিশি।

........................................................................

বিলাসী যুগের হাতিয়ার
            -শামীম আরা চৌধুরী

আসলে তোমাকে ফুলের ডালিটি দিতে
ভুল করে দিলাম দুঃস্বপ্নের মালা,
ভাঙা স্রোতে আর আকাঁবাকা মেঠোপথে
কিছু স্মৃতিসুখ কিছু শিরোনামহীন জ্বালা ।

অভিশাপগুলো রেখে যেও মনে করে
যতনে রাখবো সময়ের শিল্পীত যাদুঘরে,
ঝরা ফুল তার থাকতে নেইকো বিরল অহংকার
তৃষিত মনের ঘ্রাণ লুটে নেয়ার শুধুই অপেক্ষার ।

পাহাড়ের পাশে লুণ্ঠিত ব্যাথা ফেলে
ব্যাকরণ ভুলে দারুণ ভদ্রবেশে, বলে গেলে,
তোমাকে পাবার নেই কোন অধিকার
তুমি ধরে আছো বিলাসী যুগের আশ্রুত হাতিয়ার ।


পতাকার মাথা হেট হয়ে গেছে
       -শামীম আরা চৌধুরী

তুমি চলে গেছ সেই বহু লক্ষ যুগ আগে ।
যখন এখানে শকুনেরা পায়চারী করতো
গাছে গাছে ফুটতো না কোন আশার ফুল ।
হৃদয়ের ভাঙা রাজপথ ধরে তুমি হোঁচট
খেতে খেতে চলেছিলে বড় সুদীর্ঘকাল ।
জীবনের কণ্টকাকীর্ণ পথে হাটতে হাটতে
রক্তাক্ত করেছিলে সাবলীল পদযুগল ।
হায়েনার ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হলো
তোমার প্রতিবাদী কলমের কালি ।
অন্ধকার সমাজের দুর্বল কাঠামো ভেঙে
তুমি পড়ে গেলে নিচে ।
প্রবল পরাশক্তির কাছে তোমার দুর্বল দেহ ধরা
পড়ার ভয়ে তুমি আত্মহত্যা করে নিজেকে বাঁচালে ।
তুমি বীর । তুমি উর্বশী ।
এভাবে তোমরা মরছো যুগে যুগে,
তবুও থামেনি হায়েনার থাবা ।
তবুও চলছে শকুনের খেলা ।
তোমার কবর আজ মিশে গেছে মাটির সাথে,
তার উপরে তৈরী হয়েছে কত শত কবর ।
তোমার জন্য রচনা হয়না কোন গান,
তোমার নামে রাখা হয়না কোন রাস্তার নাম,
তোমার জন্য উম্মোচন হয়না কোন স্মৃতিফলক ।
কারণ, তুমিতো কোন মিছিলে যোগ দিয়ে
আত্মঘাতির বোমার আঘাতে নিহত হওনি ।
তুমিতো কোন বক্তৃতার মঞ্চে,
বক্তৃতা দিতে গিয়ে নিহত হওনি ।
কোন মিটিং-এ ফেস্টুন প্লাকার্ড হাতে,
শত শত মানুষের সামনে নিহত হওনি ।
তুমি ভাষার জন্য প্রাণ দাওনি,
তুমি দেশের জন্য যুদ্ধ করে প্রাণ হারাওনি,
তুমি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে মরোনি,
তুমি আত্মহত্যা করেছ ।
শধুমাত্র নিজের জন্য,
নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য,
নিজেকে বাঁচাবার জন্য চারদেয়ালের মাঝে,
অন্ধকার কুঠুরিতে সবার অলক্ষে একাকী
ঝুলে পড়লে সিলিং ফ্যানের সাথে ।
হেট হয়ে গেল লাল সবুজের পতাকা ।
তার ঝাঝরা হৃদয়ে স্বগর্বের মাথা আর
দুলাতে পারেনা ঐ নীলাকাশে ।

তোমার সেই আত্মহননের লাল চাঁদর,
আজ আমাদের শরীরে রক্তের বুদবুদ খেলে,
আমাদের শহরের আনাচে কানাচের প্রতিটি মসজিদে,গীর্জায়,
আমাদের প্রতিটি রোমকুপে শিহরণ জাগায় ।
তাই আমরা পূণ পূণ দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হই,
একটি স্মৃতির ফলক তোমাদের নামে করবো উন্মোচন ।
সার্বভৌমত্বের সুনীল ঝালরে যা দুলবে প্রেয়সী নারী, ভুলুন্ঠিত নারী ।
এই আমি দিচ্ছি তোমায় শহীদের সম্মান,
কে বলে তোমায় বীরাঙ্গনা !
তোমর ইজ্জ্বতইতো এদেশের ভাষা ।
তোমার সম্ভ্রমের অপর নামইতো স্বাধীনতা ।
তোমার আত্মহননইতো গনতন্ত্র ।
 

 
যাদুকর
         -সিরাজুজ্জামান
   
যাদুকরের দল ঘাপটি মেরে ছিল কংকালের আঁচলে
ক্ষণে ক্ষণে তারা বিভৎস দাঁতে হাসে
তাই
চারদিকের বসস্ত বাতাস কেমন পুঁথিগন্ধময়।

যাদুকরেরা কারো কারো স্বপ্নের সিঁড়িতে লালা ঝরিয়ে
সব কিছু করে দেয় ভাবনারও অতীত
যেন তার কোনো বর্তমান ছিল না, ছিল না অস্থিত্ব।
                   

দূরের পাহাড়ে আজ বিষন্নতার ছাপ
বাকহীন অরণ্য শুধু শূণ্য বাতাসের তালে নাচে
বুক ফুড়ে যাওয়া শব্দগুলো ভেতরেই থাকে তার।
 

তবুও যাদুকরের রংচঙে লাঠি ক্রমশ আঘাত করে 
প্রতিঘাত না পাওয়ার বিকট উল্লাসে।  


সিরাজুজ্জামানঃ সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিন





 নৈঃশব্দ্য আর কোলাহল
          -সিরাজুজ্জামান

সকল  নৈঃশব্দ্য জুড়ে কিথ আরবানের কোলাহল
আর উল্লাসের উন্মাদনায় নোরা জোন্সের টুংটাং
আমি কি কোনো এক অজানা পথে চলেছি?
যে পথের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নতুনের নিমগ্নতা?

এখানে আমাকে কেউ বুঝে না
চারপাশের হায়েনার মাঝে আমি তো
কেবলই কোনো এক নিরীহ তৃণভোজী শাবক।
নতুন পালক গজানোর আগেই
আমার নৈঃশব্দ্যের সব শীতের বিকেল
কেড়ে নিয়েছে শেয়াল আর হুতুম পেঁচার
ভূতুড়ে কোলাহল।

আমি কখনও হাজার মানুষের কাছে থেকেও
একা
আবার কবরের মতো নিঃশব্দ অন্ধকারেও
হাজার
আমিতো আমিই, আমার মতো
থোপ থোপ নৈঃশব্দ্য আর একক কোলাহল।


সিরাজুজ্জামানঃ সাংবাদিক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
 


 
বিরঙ্গনা মাটি
       - নীল পুরোহীত

এইখানে ডগ স্কোয়াড নয়
সাধারণ কুকুর মাটি সুঁকে বলে দেবে
এখানে ধষিতা হয়েছিলো অনেকে।


এখনও এইখানে লেফট-রাইটের
জুতোর দাগ পরে আছে সারি-সারি.....


এখানকার স্বপ্নগুলো এখন
ফেনসিডিলের বোতলের মতো
উলঙ্গ পড়ে থাকে
পিচ্ছাপ খানায়।


এখানে মদের বোতলের মতো
ভবিষ্যত পরে থাকে ডান অথবা বামে
পিপড়া'রা মদের বোতলের 
উপর দিয়ে হেঁটে যায়.......



নানান বেশ্যা
      -সিরাজুজ্জামান

তোমাদের বাগান বাড়িতে লুটোপুটি খায়
হুড়োহুড়ি করে আমার যৌবন ।
বাবার পরে ছেলে নেয় দু হাত পেতে
পেটে বাচ্চা এলে তাড়িয়ে দেয় বংশের সবাই মিলে।

তোমাদের বউয়েরা দেবর বা ভাসুরের সাথে শুয়ে
নিজস্ব ছেলে বলে চালিয়ে দেয়।

যত দোষ শুধু ওই দূরের  বিপন্নদের ।

আমরা কখনও উপভোগের নেশায় শরীর পাতি না।
নানা কৌশলে তোমরাই বাধ্য করো।

অথচ ওইসব মেয়েরা নানান ভঙ্গিমায় মেলে ধরে
কামনার শরীর তৃপ্ত করার জন্য।



সত্যি সত্যনা