১৫ জুন, ২০১১

রিমিঝিমি রিমিঝিমি রিমিঝিম..

 আজ ১৪১৮ এর পহেলা আষাঢ়। সেই সাথে শুরু হলো বর্ষাকাল।বাঙালীর প্রাণের সাথে মিশে থাকা ছয় ঋতুর এক ঋতুকাল। ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি দিয়ে শুরু হয়েছে সকাল। দিনভর বৃষ্টিও হয়েছে দেশের কোথাও কোথাও। অনেকদিন পর এমন আষাঢ়ের দেখা মিলল। প্রায় দু'বছর দেশে কোন বৃষ্টির দেখা মিলেছিলোনা, সে ক্ষেত্রে আষাঢ়ের প্রথম দিনে বৃষ্টি আশাতিত ঘটনা মনে হচ্ছিল, অনেকটা আষাঢ়ে গপ্পোর মতো শোনা যাচ্ছিল আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টি। তবুওতো বৃষ্টি হলো।আষাঢ় নিয়ে আরো গপ্পো।

 

ঝকঝকে রোদ। ছিল না মেঘের আনাগোনা। বাজেনি বৃষ্টির রিমঝিম সুর। তারপরও বর্ষার আগমনী বার্তা নগরবাসীর কাছে পৌঁছে গেছে ঠিকই। বর্ষাবরণে সবার মাঝেই ছিল উচ্ছ্বাস ও প্রাণের আবেগ। আজ বুধবার ছিল রূপময় ঋতু বর্ষার প্রথম দিন পয়লা আষাঢ়। বর্ষাকে স্বাগত জানাতে যান্ত্রিক এ নগরীতে নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন। এসব অনুষ্ঠানে গানের সুরে উঠে এল বর্ষা, নাচের ছন্দেও ভেসে বেড়াল বর্ষা, কবিতায় কবিতায় বর্ণিত হলো বর্ষা বন্দনা।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার লিচুতলায় শুরু হয় প্রথম বর্ষা উৎসব। সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরেও শুরু হয় আরেকটি বর্ষা উৎসব। মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এর আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। উদীচীর বর্ষা উৎসব: চারুকলার উৎসবে আগত বর্ষাপ্রেমীদের পোশাকেও ছিল বর্ষার নীল রং আর সাদার সমারোহ। মেয়েদের খোঁপায় ছিল ঋতুর সঙ্গে মানানসই কদমফুল। সৈকতের সেতার বাদন দিয়ে এ অনুষ্ঠানের শুরু। এরপর লায়লা আফরোজের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো বুদ্ধদেব বসুর কবিতা হৃদয় আমার। উদীচীর শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হলো চারটি গান এসো নিপোবনে, গুরু গুরু বাদল দিনে, এসো দেশ গৌর, কলকল ছলছল নদী করে। বর্ষা কথনে অংশ নেন অভিনেত্রী লাকী ইনাম। আজ শ্রাবণের লুঘু মেঘের সাথে গেয়ে শোনান শিল্পী আক্তার। লীনা তাপসীর পরিবেশনা ছিল গগনও সঘন চমকিছে দামিনি। শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা গানের তালে ভাবনা ও সখিনা হোসেন প্রেমা। বৃষ্টি পড়ে রে গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন তামান্না রহমান। ভাওয়াইয়া গান আইজ দ্যাওয়ায় দারুণ ম্যাঘ বুঝি ঝরি আসিবে গেয়ে শোনান সফিউল আলম রাজা। এছাড়াও গান গেয়ে শোনান বুলবুল ইসলাম, শারমীন সাথী ইসলাম, লাইসা আহমেদ লিসা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, বিমান বিশ্বাস, মৌসুমী সরকার, এমএ মোমিন ও সাইদুর রহমান বয়াতি। তাদের পরিবেশিত গানগুলো ছিল ধরনীর গগনের, দোলে দুল তমালে ঝুলোনাতে, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, বরষা ওই এলো বরষা, শ্রাবণের গগনের গাঢ়, একই গভীর বাণী, নোঙ্গরা ছাড়িয়ে নায়ের, আকাশ এত মেঘলা। সমগীত ব্যান্ডের শিল্পীরা গেয়ে শোনান বর্ষা নিয়ে গারোদের গান গুরগুর গুরা ডাকলো দেওয়া জঙ্গলে ঝম ঝমাঝম। সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে এ বর্ণিল বর্ষা বরণ অনুষ্ঠান। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ষা উৎসব:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সকাল ও বিকেল দুই বেলাতেই রয়েছে বর্ষার আয়োজন। সত্যেন সেন শিল্পী সংস্থার সকালের অধিবেশনে বর্ষাকে বন্দনা করে মেঘ মল্লা রাগ পরিবেশন করে এ উৎসবের সূচনা করেন শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ। এরই মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী বর্ষা উৎসব। মোবাইল কোম্পানি বাংলালিংকের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বর্ষাকথনে অংশ নেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝুনা চৌধুরী। সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি হায়াৎ মামুদ। অনুষ্ঠানে ধরিত্রীকে সবুজ রাখার আহবান জানিয়ে কেন্দ্রীয় খেলাঘরের শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। প্রভাতী অধিবেশনে উদ্বোধনী সঙ্গীত শেষে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের খুদে শিল্পীরা সমবেত কন্ঠে পরিবেশন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত 'আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে'। সমবেত সঙ্গীতে অংশ নেয় সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী, ধ্রুবতান, সুরসপ্তক ও বহ্নিশিখা। সংগঠনগুলো পরিবেশন করে 'মন মোর মেঘের সঙ্গী', 'মেঘেরও ডমরু ঘন বাজে, 'রিমঝিম ঘন ঘনরে', 'বর্ষা ঋতু এলো এলো' ও 'এই তো আষাঢ় মাসে'। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, নাসিমা শাহীন ফেলী, অনিমা রায়, সফিউল আলম রাজা, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, লিলি ইসলাম ও রত্না সরকার। শিল্পীরা গেয়ে শোনান 'রিমঝিম রিমঝিম ঘনদেয়া বরষে', 'পূর্ব হাওয়াতে দেয় দোলা', 'বহুম যুগের ওপার হতে', 'রুমু ঝুমু রুমুঝুমু কে এলে নুপূর পায়ে', 'ওগো সাঁওতালি ছেলে', 'ধাইজ দেওয়ায় দারুন ম্যাঘ বুঝি ঝরি আসিবে', আষাঢ় মাইসা ভাসা পানিরে', 'ঐ মালতি লতা দোলে' ও 'বলিস ধারা মাঝে শান্তির বারি'। দলীয় নৃত্যে অংশ স্পন্দন, আচিক কালাচারাল একাডেমী ও নৃত্যম। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন লায়লা আফরোজ ও রফিকুল ইসলাম। টিএসসিতেও বর্ষার সুর: নানা আয়োজনে বর্ষা বরণের উদ্যোগ নিয়েছে নাট্যদল 'থিয়েটার পুণ্যেভূমি'। বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বর্ষাকথনে অংশ নেবেন ঢাবি দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রওশন আরা, ড. এম মতিউর রহমান, বাংলাভিশন চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক মাসুদ কামাল, পূন্যভূমি থিয়েটারের সভাপতি জুলফিকার হুসাইন সোহাগ প্রমুখ।
বর্ষাবরণ অনুষ্ঠানে অতিথিদের মুড়ি-মুড়কী আপ্যয়নের মাধ্যমে বরণ করা হবে। সেই সাথে ডিম-খিচুড়ী ও নানা রকমের বর্ষাকালের ফলের আয়োজন রয়েছে।(সংবাদ সূত্র: বাংলানিউজ টুইয়েন্টিফোর ডটকম)