১৯৭১ সালে উপমহাদেশে পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে যে বেশ উত্তেজিত ছিল, তা
সর্বজনবিদিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর
স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় ভারতও।
তবে সে সময় পরিস্থিতি যে আরও অনেক উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল, তা এতদিন সবার
অগোচরেই ছিল। ১৯৭১
সালে উপমহাদেশে পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে যে বেশ উত্তেজিত ছিল, তা
সর্বজনবিদিত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর
স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় ভারতও।
তবে সে সময় পরিস্থিতি যে আরও অনেক উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছিল, তা এতদিন সবার
অগোচরেই ছিল। সদ্যপ্রকাশিত
গোপনীয় এক দলিলের সুবাদে জানা গেছে, ওই সময় ভারতকে আক্রমণের মাধ্যমে
যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। মার্কিন বিমানবাহী
জাহাজ ইউএসএস এন্টারপ্রাইজের ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ
ছিল। এ ছাড়া ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তটাও
প্রায় এক দিন ঝুলিয়ে রেখেছিল তত্কালীন নিক্সন প্রশাসন। ভারতের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই ছয় পাতার দলিলটি প্রকাশ করেছে বলে দ্য টাইমস অব
ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়। গোপনীয় এই দলিল অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে
পরিষ্কারভাবেই পাকিস্তানকে সমর্থন জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ভারত বা
পাকিস্তান—উভয় দেশকে কোনো ধরনের সামরিক অস্ত্র বা সহযোগিতা দেওয়ার
ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানকে
অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিয়ে গেছে নিক্সন প্রশাসন। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে
সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে চেয়েছিল
ওয়াশিংটন। ১৯৭১ সালের জুনে মার্কিন অস্ত্রবাহী তিনটি পাকিস্তানি জাহাজ
আটক করার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ভারত। সেটা তারা করতে পারত জাহাজগুলো করাচি
পৌঁছানোর আগেই—সেখানে আক্রমণ অথবা বঙ্গোপসাগরে অবরোধ জারি করে। এগুলোর কোনো
একটা পদক্ষেপ নিলেই ভারতকে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মার্কিন
সেনাবাহিনীকে। সে রকম কিছু করা হলে ভারতকে ‘আগ্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সপ্তম
নৌবহরকে এই আক্রমণ চালানোর নির্দেশটা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
নিক্সন নিজেই। সদ্যপ্রকাশিত এই দলিলে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত
ভারতীয় দূতাবাস আঁঁচ করেছিল যে যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে মার্কিন
বিমানবাহিনী ভারতের ওপর হামলা চালাতে পারে। আর এ জন্য তাদের কাছে
প্রেসিডেন্টের অনুমোদন আছে।’ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তত্কালীন পূর্ব
পাকিস্তানে আটকে পড়া মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করার জন্য এই সপ্তম নৌবহর
বঙ্গোপসাগরে পাঠানো হয়েছিল বলে আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু আসলে এটা ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণের পরিকল্পনা ছিল
ওয়াশিংটনের। ১৪ ডিসেম্বর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল
নিয়াজি ঢাকায় আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই আকাঙ্ক্ষার কথা তিনি
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান। পাল্টা জবাব পেতে ১৯ ঘণ্টা
অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে। ভারতের জ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রদূতদের সন্দেহ, হয়তো
ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্যই ওই
কালক্ষেপণ করা হয়েছিল।