বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামের
মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া। শ্রমিক নারীদের দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১০ সালে
কোপেনহেগেনে যখন প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করা হয়, তখন বাংলাদেশের
মতো একটি পশ্চাত্পদ দেশেও নারীদের উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন
বেগম রোকেয়া।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার অর্জিত হবে-এই স্বপ্ন
দেখেছিলেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্ম নেয়া বেগম
রোকেয়া। তিনি এমন একটি সময়ে জন্মেছিলেন যখন নারীদের জন্য ছিল
অন্ধকারাচ্ছন্ন ও চরম সঙ্কটময় পরিবেশ। ব্রিটিশ-ভারত শাসিত এ অঞ্চলে নারীরা
ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পশ্চাত্পদ, শিক্ষাবঞ্চিত ও অবহেলিত। এ অবস্থা থেকে
উত্তরণের জন্য বেগম রোকেয়া সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নারীদের মুক্তি ও
অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই শুরু করেন। সম্পূর্ণ প্রতিকূল সময়েও তিনি
উপলব্ধি করেছেন শিক্ষাই হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার
পূর্বশর্ত। নিজের চেষ্টায় বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতে-পড়তে শেখেন তিনি। যখন
সম্ভ্রান্ত মুসলিম নারীদের শুধু আরবি ও ফার্সি শেখার কিছুটা সুযোগ ছিল।
নারীদের জন্য শিক্ষার আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে আসেন তিনি। মুসলমান মেয়েদের
শিক্ষার জন্য ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস
হাইস্কুল।
মাত্র পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। মেয়েদের
শিক্ষার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যও নানা দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নারী শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের লড়াইকে জোরদার করতে তিনি ১৯১৬ সালে গড়ে
তুলেছিলেন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম (মুসলিম মহিলা সমিতি)’ নামে একটি
নারী সংগঠন। এই সমিতির মাধ্যমে তিনি নারী সম্মেলনের আয়োজন করতেন। নারী
শিক্ষা এবং তাদের অধিকার বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক করতেন। তিনি একাধারে লেখক ও
সমাজ সংস্কারক ছিলেন। কৃষি, পরিবেশ নিয়েও অনেক লেখালেখি করেছেন এই সাহসী ও
বিচক্ষণ নারী। বেগম রোকেয়ার সৃষ্টির মধ্যে আছে মোতিচুর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ,
অবরোধবাসিনী ইত্যাদি গ্রন্থ। এসব বইয়ের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমাজে
নারীর বন্দিদশার চিত্র তুলে ধরেছেন। বাল্যবিবাহ, পণ প্রথা, অবরোধ প্রথা ও
ধর্মের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তার দেখিয়ে দেয়া পথেই
নারী মুক্তির আন্দোলন করে যাচ্ছেন উত্তরসূরিরা। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর
মাত্র ৫২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এই মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া। রোকেয়া দিবসের গভীর তাতপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি, প্রধামন্ত্রী, বিরোধদলীয় নেত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজাকিএবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।