১৫ আগস্ট, ২০১৬

১৫ আগস্ট স্মরণে একটি কবিতা

দাদু

।। ইউসুফ আলী।।

ভুলে যাসনে দাদু এদেশের মাটি জল
মোর বুকে রক্তের সাগর খেলছে অবিরল।

বহু কষ্টে বেঁধেছিলাম সুখের সংসার
তাইতো আজ ব্যাথার অনল জ্বলছে বারংবার।

প্রতিভোরে দাদী যে তোর বলতো আমায় রেগে
এই ওঠো-আলসে ভেঙ্গে সুয্যি মামার আগে

না উঠে পারতাম না দাদু সে কি অত্যাচার!
অত্যাচরের প্রতিশোধ নিতে কইতাম না কথা আর।

দাদী যে তোর কেঁদে ভিজাতো শাড়ীর আঁচলখানি
আমায় আচ্ছা করে শাসিয়ে দিতো পুত্রবধূ রাণী।


মাঝেমধ্যে দদী যে তোর কইতো ডেকে মোরে
গাওনা শুনি দেশের গানটি তোমার মিষ্টি সুরে।

সুর শ্রবণে ঘুমিয়ে যেতো আমার কোলের পরে
আজও স্মৃতিগুলো রেখেছি গেঁথে ভুলিনি অন্তরে।

শোন দাদু শোন সুচীত্তে স্থির হয়ে শোন
সালাম রফিক জব্বার বরকত আরও কতজন।

মাতৃভাষার দাবীতে তারা নেমেছিলো রাজপথে।
হায়েনার দল ছুড়লো বুলেট তাদের বুকের সাথে।

এমনি করে কত ঘটনা গেল যে পেরিয়ে
পদ্মা, মেঘনা যমুনা চলছে ব্যাথাগুলোবুকে লয়ে।

সেই তো সেদিন আমরা সবাই কেঁদে ভাসাতাম বুক
বাবা যে তোর বলতো ‘কষ্টের পরেই সুখ’।

সেই দুর্দিনে সাত কোটি জনতার পাশে
বাংলার এক সন্তান বুক ফুলায়ে দাঁড়ালো এসে।

বজ্র কন্ঠে উঠলো বলে-
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এলো ২৫ মার্চ ঘৃণিত কালো-রাত্রি হানা দিলো
ঐ পাকিস্তানি নেমকহারাম দিয়াবলের দল।

হাত মিলিয়েছিলো ওদের সাথে কুলাঙ্গার ছোঁচা একজাত
ক্ষমা নাই তাদের বিচারের কগড়ায় ডাকবে আদালত।

পাক বাহিনীর হাতে বন্দি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান
হায়! মুজিব, হায় মুজিব! শুধু আহাজারি ক্রন্দন।

বঙ্গবাসী মসজিদ, গীর্জায়, মন্দিরে কেঁদে ভাসাতো বুক
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই, শত্রুদের গজব দাও, নিপাত হোক।

আরও কাঁদিয়া বেড়াতো এ দেশের পাখ-পাখালির দল
সবার অন্তরে দিলেন খোদা শক্তি সাহসের মনোবল।

শেখ মজিবের ডাকে গর্জে ওঠে বাংলার সন্তান
প্রতিরোধে শহীদ হলো ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ।

চরম বিপদে পাশে এসে দাড়ালো ভারত সরকার
অস্ত্রের মুখে পরাস্ত হলো পাকবাহিনী ও রাজাকার।

মুক্তি পেলো বাংলার মানুষ, সআধীন হলো বাংলাদেশ
জয় পতাকা উড়লো আকাশে মুজিব এলো বাংলাদেশ।

শেখ মুজিবের অশ্রু ঝরে সাত কোটি জনতার তরে
বললো মুজিব ‘শূন্য এদেশ ধন সম্পদে উঠবে ভরে।

বাংলা স্বাধীন আমরা স্বাধীন গর্বিত আজি বঙ্গ জাতি
হেসে খেলে এদেশ গড়ি স্মরণ করি ‘শহিদ স্মৃতি’।

বিশ্বের কাছে পরিচিত আজি সে একই দেশ
সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা মোদের বাংলাদেশ।

ভুলে যাসনে দাদু এদেশের মাটি জল
মোর বুকের রক্তে সাগর খেলছে অবিরল।

মায়ের শিশু শোভা পায় স্নেহময়ী জননীর কোলে
গর্ব  ভরে ডাকি আজি সবাই সোনার বাংলা বলে।

শোন দাদু শোন, জীবনে মোর বড় ব্যাথার দিন
তারিখ পনেরো  আগস্ট ঊনিশ শত  পঁচাত্তর সন।

ছোঁচাদের ভয়ে বাবা যে তোর বললো আমায় ডেকে
‘নাতিকে নিয়ে এখনই চলে ডাও পল্লীর বুকে’।

তাই তো সেদিন গিয়েছিলাম তোর নানার বাড়ী দাদু
বয়স তোর মাত্র ন‘মাস কাঁদছিলি তুই মৃদু।

দিনের শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো চারিদিক নিস্তব্ধ
হঠাৎ রাত দুপুরে শুনতে পেলাম গোলা বারুদের শব্দ।

পরদিন সকাল বেলা আবার তোকে কাঁধে করে
তড়িৎ বেগে ফিরে এলাম নিজেদের বাড়ি ঘরে।

দেখলাম যা সে এক বদনা বিধুর ইতিহাস
দেখেনি আজও কেউ এমন লোমহর্ষক ত্রাস।

উঠানের মাঝে জড়াজাড়ি করে সোনামুখগুলো শুয়ে
কে যেন লাল চাদর বিছায়েছিলো তাদের গায়ে।

তোকে উঠোনের কোণে বসিয়ে কি করি আর
দুনিয়ার যত পাথর এসে চেপে ছিলো বুকের পর।

শোন দাদু শোন, আপন হস্তে কোদাল মেরে
অশ্রুজলে সমাধি গড়ে রাখলাম তাদের মাটির ঘরে।

দিলেম শুইয়ে সোনামুখগুলো যত প্রথম সারিতে
তোর বাবা, ভাই ও দাদিকে রাখলাম তাতে।

তারপর দিলাম তোর দু’বোন এক চাচাকে পাশে
পরিশেষে এলামেোর মা জননী রাণীর কাছে।

মুহুর্তে ভেঙ্গে যায় মোর জীবনের সকল সাধ
দেখি তুইঅবাধে চুষতেছিলি রাণীর বুকের দুধ।

সরালি যখনই রাণীর বুক থকে তুই মুখ
চোখের নিমিষে একই সমাধিতে রেখে দিলাম তাক।

তারপর কি হলো জানিনা সোনা দাদু ভাই
সাতটি কৃ্ষ্ণচূড়া আজও মাথা উচিয়ে তাই।

শোন দাদু শোন এবার যাবার পালা এসেছে আমার
দাদুগো দু:খ রলা বিয়ের কার্য  অসম্পূর্ন রলো তোর।

মরার পরে আার সমাধি দিওগো ঐ কৃষ্ণচূড়ার তলে
দু:খ বেদনা ভুলে গিয়ে শান্তি পাবো বলে।

ভুলে যাসনে দাদু এদেশের মাটি জল
মোর বুকের রক্তে সাগর খেলছেবিরল।

দোয়া মাঙ দাদু ্খানে শুয়ে যারা চিরনিদ্রায়
তাদের তরে যেন খোদার বেহেশত নসিব হয়।