৪ ডিসেম্বর, ২০১০

বাংলা নিউজের চোখে খালেদা জিয়ার ১২ সমস্যা




খালেদার বারো সমস্যা


খালেদার বারো সমস্যা
এমন একটি গবেষনায় দেখা গেছে মাত্র ১২টি সমস্যায় আছেন আমাদের প্রান প্রিয় বিরোধী দলীয় নেত্রী, সেই ১২টি সমস্যা কি কি? তা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশর প্রথম শ্রেণীর অন লাইন দৈনিক বাংলা নিউজ টুয়েন্টিঢফার ডটকম ..........তুলে ধরা হলো। বারো সমস্যা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এসব সমস্যার কিছু তার পারিবারিক। বাকিগুলো রাজনীতি ও তার দল বিএনপি সম্পর্কিত। এসব সমস্যায় নিজে বিব্রত, ক্ষেত্রবিশেষে নাস্তানাবুদ তো হচ্ছেনই, প্রভাব পড়ছে দলীয় কর্মকাণ্ড আর চলমান রাজনীতিতেও।
সমস্যাগুলোর কারণ ও চলমান পরিস্থিতি অনুসন্ধান করেছে বাংলানিউজ।
এক, খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন বাড়ি ইস্যুতে। সেনানিবাসের বাসা থেকে উচ্ছেদের পর সেখান থেকে মালামালও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব মালপত্র নেওয়া হয়েছে গুলশানের ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কাইয়ুম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ও তারেক রহমানের ধানমন্ডির শ্বশুর বাড়িতে। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর তিন ভাগ হয়ে গেছে খালেদা জিয়ার সংসার। আর তিনি পরিণত হয়েছেন চালচুলোহীন মানুষে। তাই একই বাড়িতে দুই পুত্র ও পুত্রবধূ আর তিন নাতনি নিয়ে আবারো সংসার সাজিয়ে বসা আপাতত অনিশ্চিতই বটে। দুই, দুই ছেলেকে নিয়েও দারুণ সমস্যায় আছেন খালেদা। বড় ছেলে তারেক রহমান একপ্রকার নির্বাসিত জীবনই কাটাচ্ছেন লন্ডনে। অপর ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে যম-মানুষের টানাটানি চলছে থাইল্যান্ডের হাসপাতালে।
তার ওপর উভয়ের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে যে কোনো সময় দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করানোর হুমকি। তাদের নামে বেশ কিছু মামলা তো আছেই, ঠোকা হচ্ছে নতুন মামলাও। তিন, মামলা আছে খালেদা জিয়ার নামেও। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ সরানোর মামলাটি এখন বিচারধীন নিম্ন আদালতে। আরো তিন মামলার কার্যক্রম আপাতত হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকলেও যে কোনো সময় সেগুলো চালু হতে পারে। তাই মামলার খড়গও খালেদা জিয়ার দুশ্চিন্তার কারণ বলে জানিয়েছে তারই পারিবারিক সূত্র। চার, মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিয়েও বেকায়দায় আছেন বিএনপি প্রধান। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী ভূমিকার কারণে খালেদার আস্থা অর্জনকারী দেলোয়ার এখনো তার আস্থার প্রতিদান দিতে থাকলেও দলের অনেক সিনিয়র নেতাই অসুস্থতাজনিত কারণে তাকে নেতৃত্বদানের অযোগ্য মনে করেন। কিন্তু খোন্দকার দেলোয়ারকে হুট করে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দিলে ‘বিএনপি নিবেদিত নেতাদের মূল্যায়ন করে না’ বলে যে আলোচনা দলীয় পরিমণ্ডলে চালু আছে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তাই মহাসচিব পদ নিয়েও মহাবেকায়দায় আছেন বিএনপি প্রধান।  তিনি মহাসচিবের কাজও চালাচ্ছেন জোড়াতালি দিয়ে। অনেক সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেয়ারপারসনের নির্দেশনায় মহাসচিবের বিকল্প হিসেবে কাজ করছেন। পাঁচ, সংসদ উপনেতার পদ নিয়েও বিপাকে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এখন পর্যন্ত সংসদে বিএনপিকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করত দেখা যায়নি। বিরোধী দলীয় উপনেতা না থাকাই এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। সূত্রের দাবি, এ সংসদে বিএনপির কাজে কোনো সমন্বয় দেখা যায়নি। বরং অন্তর্দ্বন্দ্ব আর অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে হরহামেশাই। তাই সংসদে মাঝেমধ্যেই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বিএনপিকে। দলীয় সূত্র জানায়, গত সংসদ নির্বাচনের পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সংসদ উপনেতা করার গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই গ্রীন সিগন্যাল শেষ পর্যন্ত বাস্তব রূপ পায়নি। আর উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে সামনের সারিতে  খালেদা জিয়ার পাশের আসনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকেই  দেখা গেছে। এ ঘটনায় ুব্ধ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংসদে যাওয়া কমিয়ে দেন। সংসদে নি®প্রভ হয়ে যান দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান তকমা কুড়োনো সালাউদ্দিন কাদের। অপরদিকে ব্যারিস্টার মওদুদকেও সংসদ উপনেতা ঘোষণা করা হয়নি খালেদার। আর এখন তো পুরো দল সংসদের না ফেরার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। ছয়, সিনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্ব সামলাতেও নাস্তানাবুদ হচ্ছেন খালেদা জিয়া। বিশেষত স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশি বেকায়দায় আছেন বিএনপি প্রধান। সাত, সমস্যা আছে সহযোগী সংগঠনগুলোতেও। মনকষাকষি আছে সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবনেতাদের মধ্যে। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে গ্রুপিং আছে যুবদলে। একাধিক গ্রুপের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে ছাত্রদলেও। এছাড়া মহিলা দলে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে শিরিন সুলতানা ও হেলিন জেরিন খানের গ্রুপের মধ্যে। বিএনপির কাণ্ডারি খালেদা জিয়া কিছুতেই এসব সমস্যার সমাধান টানতে পারছেন না। আট, চার দলীয় জোটের শরীক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে বিএনপির। তাই বিএনপি আহূত কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনেকটা গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে জোটের শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ বিষয়টাও খালেদার জিয়ার অন্যতম মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আভাস দিচ্ছে দলীয় সূত্র। নয়, দলের সংস্কারপন্থীদের নিয়েও বেশ বেকায়দায় আছেন খালেদা জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংস্কার প্রস্তাব তুলে বিএনপি থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার দাবি তোলা অনেক নেতাকেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে আত্মসংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’ প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করতে এসব নেতা এখনো তৎপর রয়েছেন দলের মধ্যেই। তাদের সঙ্গে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব চলছে মূল বিএনপির। দুই নেত্রীকে একত্রে বসাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উদ্যোগ এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্ব নিয়ে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ওই মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়েও বিব্রত হচ্ছেন খালেদা জিয়া। দশ, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও বেকায়দায় আছেন খালেদা। এজন্য অনেক স্থানেই কমিটি গঠন করতে পারেননি তিনি। তাই কিছু কমিটি বাদ দিয়েই সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল করতে হয়েছিল তাকে। এখনো অনেক স্থানে কমিটি করতে পারছেন না তিনি। আর দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচেন নিজেদের প্রার্থী বসিয়ে রেখে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মনজুর আলমকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। এতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করলেও তাকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়ে। বর্তমানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিনের মতো চট্টগ্রামের অনেক নেতার মুখেই দল ও খালেদা জিয়ার সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। এগারো, খালেদা জিয়া সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে। গত দু’বছর ধরে কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও ঢাকা মহানগর বিএনপির পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। সূত্র জানায়, মহানগর কমিটির ঘোষণা দেরি হওয়ায় মির্জা আব্বাস ধরে নিয়েছেন, খোকাকেই দেওয়া হচ্ছে সভাপতির পদ। ফলে তিনি ও তার সমর্থকরা অনেকটা হাল ছেড়ে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। আবার অপো করতে করতে ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটেছে খোকারও। বর্তমানে তিনিও মহানগর বিএনপি কমিটি নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছে তারই ঘনিষ্ঠ সূত্র। তাই বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনে ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীদের পুরোদমে সক্রিয় রাখার দায়িত্ব কেউই নিতে চাইছেন না। তাই ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি পড়েছে ঝিমিয়ে। আর এ নিয়ে মাথা ভারি হয়ে উঠেছে খালেদার। বারো, খালেদার জিয়ার আরো একটি সমস্যা শুরু হয়েছে তাকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর। তার বাড়িতে মদের মতো নিষিদ্ধ দ্রব্য পাওয়া নিয়েও ব্যাপক প্রচার চলছে।  আওয়ামী লীগ সমর্থক এক ইসলামী দল এরই মধ্যে এ নিয়ে ব্যানার, সাইনবোর্ডও টানিয়েছে রাজধানীর রাস্তার পাশে। এ ইস্যুকে বিএনপির পক্ষ থেকে সাজানো বলে উড়িয়ে দেওয়া হলেও আগামী নির্বাচনে এটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়টিও খালেদা জিয়ার অন্যতম চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। বিএনপি প্রধানের এসব সমস্যা নিয়ে বিএনপির নেতারা মুখ খুলতে রাজি হননি। (মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্টবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)