নেপালের রাজপরিবারের হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পূর্ণ হল আজ ১ জুন। সে দিনের ওই ভয়াবহ ঘটনায় যুবরাজ দীপেন্দ্রের হাতে রাজপরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়। যার কারণ এখনো রহস্যে ঘেরা। বহু নেপালি মনে করেন, তারা কখনোই সত্য জানতে পারবেন না। তাদের ধারণা, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণেই প্রাণ দিতে হয় জনপ্রিয় রাজা বীরেন্দ্রকে। কাঠমাণ্ডুতে ২০০১ সালের ওই রাতে মাদকাসক্ত ও মদ্যপ যুবরাজ দীপেন্দ্রের হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আরো পাঁচ আত্মীয় নিহত হয়। পরে তিনি নিজেও আত্মহত্যা করেন। বলা হয়ে থাকে, পছন্দের মানুষকে বিয়ের ব্যাপারে রানী আপত্তি করায় ৩১ বছর বয়সী দীপেন্দ্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যার ফলাফল ওই হত্যাযজ্ঞ। তবে এত বড় রক্তক্ষয়ের এত সরল সমীকরন মেনে নিতে নারাজ নেপালিরা। ফলে ১০ বছর ধরে বারবারই ঘুরে ফিরে আসছে ষড়যন্ত্রের কথা। দেশটিতে রাজাকে দেখা হয় হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর পুনর্জন্মের রূপ হিসেবে। রাজপ্রাসাদের সাবেক সেনা সচিব বিবেক কুমার শাহ বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের পর সরকার যে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল তাতে শুধু কী ঘটেছিল এবং কীভাবে ঘটেছিল তার বিবরণ দেওয়া হয়। কেন ঘটেছিল সে ব্যাপারে এতে কিছুই জানানো হয়নি।' তিনি জানান, ভেতর-বাইরের কিছু শক্তি যুবরাজকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। তবে এ প্রসঙ্গে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি। 'সেসময় রাজতন্ত্রের অবসানের ব্যাপারে আগ্রহী বেশ কিছু গোষ্ঠি ছিল।' এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অবশ্য শুরু থেকেই রাজা বীরেন্দ্রর ভাই জ্ঞানেন্দ্র জড়িত বলে গুজব ছিল। জ্ঞানেন্দ্র পরবর্তীতে সিংহাসনে আসীন হন। যদিও ভাইয়ের মত জনপ্রিয়তা তার কপালে জুটেনি। বরং নানান বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের বিরাগভাজন হন তিনি। তার সময়েই রাজতন্ত্রেরও অবসান হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় জ্ঞানেন্দ্র কাঠমাণ্ডুতে ছিলেন না। নেপালের সাপ্তাহিক 'জনআস্থা'র সম্পাদক কিশোর শ্রেষ্ঠ বলেন, 'দুঃখ-ভারাক্রান্ত মানুষ জ্ঞানেন্দ্র ষড়যন্ত্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধরে নেয়।' ফলে সিংহাসনে বসার আগে থেকেই তার ব্যাপারে জনগনের মনোভাব খুব একটা ইতিবাচক ছিল না। এরপর ২০০৫ সালে তিনি সরকারকে বরখাস্ত করলে মানুষ তার ব্যাপারে আরো বিরূপ হয়ে ওঠে। সাংবাদিক যুবরাজ ঘিমিরে জ্ঞানেন্দ্রর সরকার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, 'ঐতিহ্যগতভাবে রাজাদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে সম্মান তা চলে যায় ওই সিদ্ধান্তের কারণে।' তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎকালীন মাওবাদি বিদ্রোহীরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনেই কারণে নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে। সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হন জ্ঞানেন্দ্র। বহু নেপালি তখন রাজা ও তার উচ্ছৃংখল ছেলে পরশের বিদায়ে হাপ ছেড়েছিলেন। যদিও তাদের গণতন্ত্রের স্বপ্ন আজো সুদূরপরাহত। নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে তাদের রাজনৈতিক জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে। (সূত্র : এএফপি, প্রকাশিত: কালের কন্ঠ)
১ জুন, ২০১১
জট খোলেনি নেপালের রাজপরিবারের হত্যাকাণ্ডের
নেপালের রাজপরিবারের হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পূর্ণ হল আজ ১ জুন। সে দিনের ওই ভয়াবহ ঘটনায় যুবরাজ দীপেন্দ্রের হাতে রাজপরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়। যার কারণ এখনো রহস্যে ঘেরা। বহু নেপালি মনে করেন, তারা কখনোই সত্য জানতে পারবেন না। তাদের ধারণা, প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণেই প্রাণ দিতে হয় জনপ্রিয় রাজা বীরেন্দ্রকে। কাঠমাণ্ডুতে ২০০১ সালের ওই রাতে মাদকাসক্ত ও মদ্যপ যুবরাজ দীপেন্দ্রের হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আরো পাঁচ আত্মীয় নিহত হয়। পরে তিনি নিজেও আত্মহত্যা করেন। বলা হয়ে থাকে, পছন্দের মানুষকে বিয়ের ব্যাপারে রানী আপত্তি করায় ৩১ বছর বয়সী দীপেন্দ্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। যার ফলাফল ওই হত্যাযজ্ঞ। তবে এত বড় রক্তক্ষয়ের এত সরল সমীকরন মেনে নিতে নারাজ নেপালিরা। ফলে ১০ বছর ধরে বারবারই ঘুরে ফিরে আসছে ষড়যন্ত্রের কথা। দেশটিতে রাজাকে দেখা হয় হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর পুনর্জন্মের রূপ হিসেবে। রাজপ্রাসাদের সাবেক সেনা সচিব বিবেক কুমার শাহ বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের পর সরকার যে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল তাতে শুধু কী ঘটেছিল এবং কীভাবে ঘটেছিল তার বিবরণ দেওয়া হয়। কেন ঘটেছিল সে ব্যাপারে এতে কিছুই জানানো হয়নি।' তিনি জানান, ভেতর-বাইরের কিছু শক্তি যুবরাজকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। তবে এ প্রসঙ্গে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি। 'সেসময় রাজতন্ত্রের অবসানের ব্যাপারে আগ্রহী বেশ কিছু গোষ্ঠি ছিল।' এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অবশ্য শুরু থেকেই রাজা বীরেন্দ্রর ভাই জ্ঞানেন্দ্র জড়িত বলে গুজব ছিল। জ্ঞানেন্দ্র পরবর্তীতে সিংহাসনে আসীন হন। যদিও ভাইয়ের মত জনপ্রিয়তা তার কপালে জুটেনি। বরং নানান বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের বিরাগভাজন হন তিনি। তার সময়েই রাজতন্ত্রেরও অবসান হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় জ্ঞানেন্দ্র কাঠমাণ্ডুতে ছিলেন না। নেপালের সাপ্তাহিক 'জনআস্থা'র সম্পাদক কিশোর শ্রেষ্ঠ বলেন, 'দুঃখ-ভারাক্রান্ত মানুষ জ্ঞানেন্দ্র ষড়যন্ত্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধরে নেয়।' ফলে সিংহাসনে বসার আগে থেকেই তার ব্যাপারে জনগনের মনোভাব খুব একটা ইতিবাচক ছিল না। এরপর ২০০৫ সালে তিনি সরকারকে বরখাস্ত করলে মানুষ তার ব্যাপারে আরো বিরূপ হয়ে ওঠে। সাংবাদিক যুবরাজ ঘিমিরে জ্ঞানেন্দ্রর সরকার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, 'ঐতিহ্যগতভাবে রাজাদের প্রতি সাধারণ মানুষের যে সম্মান তা চলে যায় ওই সিদ্ধান্তের কারণে।' তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎকালীন মাওবাদি বিদ্রোহীরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনেই কারণে নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটে। সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হন জ্ঞানেন্দ্র। বহু নেপালি তখন রাজা ও তার উচ্ছৃংখল ছেলে পরশের বিদায়ে হাপ ছেড়েছিলেন। যদিও তাদের গণতন্ত্রের স্বপ্ন আজো সুদূরপরাহত। নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে তাদের রাজনৈতিক জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছে। (সূত্র : এএফপি, প্রকাশিত: কালের কন্ঠ)