অরূপ রাহী ●
ক. দৈনিকের পাতায় সাক্ষাৎকার।
-আপনি এখন কোথায়?
-আমি এখন হোতাপাড়ায়। অমুক নাটকের শুটিংয়ে। অমুক নাটকের। খুবই মজার গল্প। দর্শক মজা পাবেন। অনেক মজা হয়েছে শুটিংয়ে।
-নতুন কি কাজ করছেন?
-বেছে বেছে কাজ করছি। সামনে অমুকের, তমুকের আর সমুকের কাজ করব। আরো কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে।
-বিয়ের গুজব শুনলাম?
-আসলে কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসে, তারাই এসব বলে বেড়াচ্ছে।
খ. আজকে তো ক খ গ ফোনোলাইভে গান গাইবেন। কি কি গান করবেন?
-আমার অমুক অমুক এবং মেলডি, সফট রক ধারার আরো কিছু গান করব।
-আপনি নাকি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ কাজ করছেন?
-হ্যঁা। আসলে আমি অমুকের কাছে এতদিন ক্লাসিক্যাল এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ তালিম নিয়েছি। সামনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ অ্যালবাম করব।…
৫.
ক. দৈনিকের পাতায় সাক্ষাৎকার।
-আপনি এখন কোথায়?
-আমি এখন হোতাপাড়ায়। অমুক নাটকের শুটিংয়ে। অমুক নাটকের। খুবই মজার গল্প। দর্শক মজা পাবেন। অনেক মজা হয়েছে শুটিংয়ে।
-অমুক জায়গায় নাকি গিয়েছিলেন শুটিং করতে?
-হ্যঁা। একটা টেলিকম কোম্পানির বিজ্ঞাপনের শুটিং ছিল। অনেক মজা হয়েছে। আর অমুক ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা সৌভাগ্যের ব্যাপার।-নতুন কি কাজ করছেন?
-বেছে বেছে কাজ করছি। সামনে অমুকের, তমুকের আর সমুকের কাজ করব। আরো কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে।
-বিয়ের গুজব শুনলাম?
-আসলে কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ভালোবাসে, তারাই এসব বলে বেড়াচ্ছে।
খ. আজকে তো ক খ গ ফোনোলাইভে গান গাইবেন। কি কি গান করবেন?
-আমার অমুক অমুক এবং মেলডি, সফট রক ধারার আরো কিছু গান করব।
-আপনি নাকি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ কাজ করছেন?
-হ্যঁা। আসলে আমি অমুকের কাছে এতদিন ক্লাসিক্যাল এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ তালিম নিয়েছি। সামনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘ওপর’ অ্যালবাম করব।…
এরকম কথোপকথন গণমাধ্যমে অনেক শুনেছেন এবং পড়েছেন, তাই না? দুই-তিনদিন পত্রিকা, টিভি, রেডিও খুললে আপনিও হয়ে যেতে পারেন এরকম অনেক কথোপকথনের রচয়িতা! ‘জনপ্রিয়’, ‘সেলিব্রেটি’ ‘মিডিয়ার লোক’ বা ‘তারকা’ লোকজনের ইন্টারভিউ, মন্তব্য, কথাবার্তা, নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন। ভুল হবে না। বাক্য, শব্দ ব্যবহারের ভুল-ঠিক তো নস্যি। এই যে ‘মজা’, ‘ভালো’, ‘আনন্দ’, ‘বিনোদনে’র ‘ফরম্যাট’, গৎ,- এটা তৈরিতে গণমাধ্যমের নিজের ভূমিকা আট আনার অনেক বেশি। কিন্তু এটি বাহ্য। ‘আনন্দ’-‘বিনোদনে’র আয়োজন ও তার খবর-ফিচার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূলধারার ‘গণমাধ্যম’ সমাজ-সংস্কৃতিতে যে রাজনীতি করছে তা নিয়ে কিছু আলাপ করা যাক।
২.পত্রিকা-রেডিও-টেলিভিশনে আনন্দ-বিনোদন বলতে গান-নাটক-সিনেমা-নাচ-ছবি অাঁকা, মেলা ইত্যাদিকেই বোঝানো হয়। সেই অনুসারে পত্রিকার ‘আনন্দ-বিনোদন’ পাতায় বেশিরভাগ অংশজুড়ে থাকে দেশীয়, ভারতীয় এবং হলিউড ‘সেলিব্রেটি’ এবং সংস্কৃতি-পণ্য নিয়ে ফিচার। বলিউড সংস্কৃতির নামকীর্তন ছাড়া পত্রিকার বিনোদন পাতা পবিত্র হয় না। হলিউড তো স্বর্গের দেব-দেবীদের পদস্পর্শে ধন্য। তার কোনো কিছু ছাড়া, তার গুণকীর্তন ছাড়া কী করে ‘সংস্কৃত’ হওয়া যায়? অল্প স্থান পায় মঞ্চনাটক, ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে ‘বিখ্যাত’ কোনো ‘উচ্চাঙ্গ’ সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে আক্ষেপ শুনতে পাই যে ‘উচ্চাঙ্গ’ সঙ্গীতকে ‘মিডিয়া’ জায়গা এবং গুরুত্ব কম দিচ্ছে। যদিও ‘উচ্চাঙ্গ’ তবলাবাদক জাকির হোসেনের মতো ‘সেলিব্রেটি’র জায়গার অভাব হয় না। এরকম চার-পাঁচজনের নাম অনায়াসে করা যাবে, যাদের খবর ‘মিডিয়া’য় ভালোই থাকে। মূলধারায় কোনো বিষয় কতখানি জায়গা পাবে, তা প্রধানত নির্ধারণ হয় ‘জনপ্রিয়তা’র, খাওয়ার (এবং খাওয়ানোর) মাপকাঠি দিয়ে। জনপ্রিয়তা এবং তার মাপকাঠি- দুটিই বিতন্ডিত বিষয়। যেমন বিতন্ডিত ‘সংস্কৃতি’ নিজেই। জোর বাহাস আছে ‘উচ্চাঙ্গ (high)’, ‘মাঝারি’, ‘পপুলার (popular)’ বা ‘লো ( low)’ বা ছোটলোক শিল্প এবং সংস্কৃতি নিয়ে। তার খবর একটু নেওয়া যাক।
৩.‘গণ’-বলতে আমরা মোটামুটি যে অর্থ বুঝি, অর্থাৎ ‘গণসমাজ’, তার সাম্প্রতিক চেহারা পায় পশ্চিমের শিল্প বিপ্লবের পর। একটা বিশাল শ্রমিক শ্রেণীর পাশাপাশি ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীদের হাজির হওয়া, পরিবারের মতো সনাতন প্রতিষ্ঠানের সমাজে সাংস্কৃতিক প্রভাব কমে যাওয়া এবং ক্ষমতার কেন্দ্র সরে গিয়ে মালিক-ব্যবস্থাপকদের-শ্রমিক দ্বন্দ্ব ও সমঝোতার নতুন সমীকরণে পেঁŠছানো-সবকিছু সমাজের সাবেকি চেহারা পাল্টে দিয়ে নতুন সাংস্কৃতিক উৎপাদনের চাহিদা তৈরি হয়। এর ফলে পুরনো ‘লোক’ এবং ‘এলিট’ সংস্কৃতির চেয়েও অর্থনৈতিক মাপে বড় ‘গণ’ বা ‘পপুলার’ বা ‘জনপ্রিয়’ সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। নতুন এই বিশাল সাংস্কৃতিক পণ্য বাজার পুঁজির নজর এড়ায়নি। তাই গড়ে ওঠে ‘আধুনিক’ সংস্কৃতি বাণিজ্য বা কালচার ইন্ডাস্ট্রি (culture industry )। ‘গণ’র চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ‘গণচাহিদা’কেও নিজের ছাঁচে ফেলার বাস্তব ক্ষমতা পুঁজির তৈরি হয়। মানব সভ্যতা নতুন এক সাংস্কৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়, যেখানে অনেকগুলো জটিল সমস্যা হাজির হলো। যেমন- ‘উচ্চাঙ্গ’-নিম্নাঙ্গ’ শিল্প ও সংস্কৃতির আপাতদৃষ্টিতে গড়হাজির দ্বন্দ্ব, ‘পপুলার’ বা ‘জনপ্রিয়’ বনাম ‘সিরিয়াস ( serious)’ শিল্প-সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব। আর্ট এবং ‘পুঁজি’র দ্বন্দ্ব। এখানে বলে রাখা ভালো, দ্বন্দ্ব বলতে শুধু দ্বৈরথ যেন না বুঝি। দ্বন্দ্বের বহুমাত্রিকতা আছে। পুঁজিতন্ত্রে পণ্য হিসেবে কোনো ‘আর্ট’কে বাজারে বিকাতে হলে বাজার কিংবা পণ্যে বা উভয়তেই কিছু আবশ্যিক শর্ত হাজির থাকতে হয়। এই শর্ত পালন করতে গিয়ে পুঁজি এবং ‘আর্ট’ একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে ‘আর্ট’-এর বাইরেও অন্য অনেক সাংস্কৃতিক সঙ্গ-অনুষঙ্গ বাজার সম্পর্কের মধ্যে পড়ে যায়। আমাদের চারপাশে তার অনেক উদাহরণ আছে।
‘গণমাধ্যম’ নিজেও যখন বাজারি , তখন এর প্রধান ভূমিকা ঠিক করে দেয় এই কালচার ইন্ডাস্ট্রির তথা পুঁজির নিজস্ব যুক্তি। নিজস্ব নিয়ম। নিজের বৈশিষ্ট্য। যা কিছু লোকে ‘খায়’ এবং যা কিছু লোককে ‘খাওয়ানো’ যায়, যা কিছু পুঁজির নিজের স্বার্থে ‘খাওয়ানো’ দরকার, তার সব পসরা নিয়ে সে হাজির হতে থাকে। এই ‘খাওয়া’র একটা বিনোদন মাত্রা আছে। এই ‘খাওয়া-খাওয়ি’র জন্যই বাজারি গণমাধ্যম একটা জনসংস্কৃতিকে তার নাড়ির যোগ থেকে ‘সাংস্কৃতিকভাবে’ই সরিয়ে নিয়ে, জনগণের যাপিত-জীবন থেকে বিচ্ছিন করে কালচারাল প্রোডাক্ট বা সাংস্কৃতিক পণ্যে পরিণত করে। এর জন্য অনুকূল বাতাবরণ সৃষ্টি করতে এ পণ্যের বণিক-সওদাগর-হবু-গবুদের সমাজে আদর্শায়িত করে তাদের মধ্যস্থতায় ‘বিনোদন’ শিল্প থেকে সমাজে নানারকম ধারণা ও মূল্যবোধ আনা-নেওয়া করে।
এই খাওয়া-খাওয়ি শিল্পসংস্কৃতি এবং এর থেকে মুনাফাকরণ নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে শ্রমিক-উৎপাদক-মালিক-ব্যবসায়ী-ব্যবস্থাপক-নির্বাহী-সবার জন্য ‘নিরাপদ সড়ক’ হলো ‘মিডিওক্রেসি’ (mediocracy)-মাঝারিমান জিন্দাবাদ নীতি। অন্যদিকে আর্ট-পুঁজির সম্পর্কের নানামাত্রিক জটিলতায় সবপক্ষের কাছে যা সবচেয়ে আরামদায়ক সমাধান, তারও নাম ‘মিডিওক্রেসি’। এই মিডিওক্রেসি ধরেই নেয় ‘সাধারণ’ লোকেরা কম বুঝবে। আর ‘সাধারণ লোকে’ যাতে কম বুঝের মধ্যেই থাকে, তা দেখভাল করাইতো বাজারি মিডিয়ার কাজ। মুখে তারা ‘উচ্চমান’ বলবে। কাজে করবে মাঝারিমানের সেবা। গালাগালি করবে ‘নিম্ন’-মানের সংস্কৃতির। মাঝেমধ্যে ‘উচ্চ’ সংস্কৃতির বা ‘ক্রিটিক্যাল’ বা র্যাডিক্যাল সংস্কৃতির ছিঁটে-ফোঁটা-ফিলার দেবে। তা না হলে বৈধতার সংকট সৃষ্টি হয়। কোনো শিল্প-সংস্কৃতি উচ্চ, মাঝারি বা নিম্নমানের- তার সমাধান কিন্তু হলো না। নতুন মাত্রায় পেঁŠছালো মাত্র। মিডিওক্রেসি তাই ‘আমজনতা’র জন্য সাংস্কৃতিক মাল বা পণ্য ব্যবসা শুধু নয়। ‘মিডিওক্রেসি’ হলো সংস্কৃতি ব্যবসার (culture industry) ফন্দি-ফিকির-তরিকা-পদ্ধতি-কৌশল। ‘মিডিওক্রেসির’ প্রাণ ভোমরা হলো ‘পপুলিজম’। জনপ্রিয়তাবাদ। জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে নগদে ক্ষমতা ও অন্যান্য ধান্ধা করাকেই পপুলিজম বলা যায়। জনপ্রিয়তা সবসময় খারাপ জিনিস না। কিন্তু জনপ্রিয়তা সবসময় ভালো জিনিসও না। পুরুষতান্ত্রিক অনেক সংস্কৃতি এখনো দুনিয়ায় জনপ্রিয়। জনপ্রিয় কালোকে ঘৃণা করা। ইত্যাদি। এর কোনোটাই ভালো না। আবার, পুঁজিতন্ত্র ও বাজারি মিডিয়া নিজের প্রয়োজন মতো মাপঝোক দিয়ে ‘জনপ্রিয়’, ‘তারকা’, ‘সেলিব্রেটি’ বানিয়ে নেয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দেয়। ফলে, জনপ্রিয়তা, ভালো-মন্দ- সবই চূড়ান্ত অর্থে রাজনৈতিক। মিডিওক্রেসির রাজনীতি হলো জনপ্রিয়তার নামে সব পর্যালোচনাহীন, খেলো, পলকা, নিষ্প্রাণ, নির্বিচার ভোগবাদি, প্রতিক্রিয়াশীল সব শিল্প-সংস্কৃতি ও তার ‘জনপ্রিয়’, ‘তারকা’, ‘সেলিব্রেটি’দের আদর্শায়িত করা এবং এই ধারাকে টিকিয়ে রাখা।
৪.‘পাবলিক’ চায়, ‘পাবলিক’ খায়- বলে ‘পপুলার মিডিয়া’ যে ‘মিডিওক্রেসি’ চাপিয়ে দিচ্ছে, সেখানে ‘পাবলিক’-এর ভূমিকা কি? জনগণ কি শুধুই ‘মাঝারিমান মালামাল’-এর নিষ্ক্রিয় ভোক্তা? হ্যাঁ এবং না-দুটোই। আর্ট-কালচার-এর অ্যাপ্রিসিয়েশন বা সমঝদারি নিজেই একটা সামাজিক- সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া। শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়াসহ নানারকম প্রতিষ্ঠান এবং জীবনের সামগ্রিক এলাকায় উৎপাদিত ‘জ্ঞান’ , ‘সচেতনতা’ ও সম্মতি আর্ট-কালচারের গড্ডালিকাকে টিকিয়ে রাখে। সমাজে পর্যালোচনার সংস্কৃতি প্রভাবশালী থাকলে সংস্কৃতির প্রগতিশীল বিকাশ হয়। তার জন্য দরকার হয় পর্যালোচনাহীন, খেলো, পলকা, নিষ্প্রাণ, নির্বিচার ভোগবাদি, প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ ও সংস্কৃতির আধিপত্য থেকে সমাজ-জনগণের মুক্তির প্রক্রিয়া। অনেক মানুষ এই আধিপত্য থেকে মুক্ত বলেই সেই ধরনের আর্ট-কালচার সমাজে প্রান্তিক হলেও হাজির আছে এবং জনগণের একটা অংশ তার সমঝদারিও করে। বাকিরা করে পণ্যসংস্কৃতির দাস্যবৃত্তি।
সমঝদারি প্রসঙ্গে একটু বলে রাখা ভালো-‘সভ্য’ অর্থাৎ শ্রেণীবিভক্ত পুঁজিবাদি সমাজে আর্ট-কালচার মানুষের জীবনের অন্তরঙ্গ ব্যাপার নয়। বহিরঙ্গ। তাই এক আলাদা করে খেয়াল করার, সমঝদারি করার প্রসঙ্গ আসে।৫.
এতক্ষণ বাজারি গণমাধ্যমের সংস্কৃতি নিয়ে রাজনীতির যা যা লক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম, তার প্রায় সবই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উপস্থিত। মূলধারার ‘গণমাধ্যম’কে আজকের দিনে আর ‘গণমাধ্যম’ বলা যায় কিনা সেই প্রশ্ন এখানে রাখা যায়। বাংলাদেশের উদাহরণই যদি ধরি, সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল জনসমাজের নানামাত্রিক মুক্তি-সংগ্রামের হাতিয়ার ও সহযোগী হিসেবে। উপনিবেশসহ সবধরনের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে বেশিরভাগ সংবাদপত্র এবং অন্যসব গণমাধ্যম করপোরেট পুঁজিতান্ত্রিক শোষণ-লুটপাটের হাতিয়ার ও সহযোগী। এর কারণ উদ্যোক্তা, বিনিয়োগের ধরন ও উদ্দেশ্যে পরিবর্তন। সাম্র্রাজ্যবাদের যুগে সংস্কৃতির গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য দরকার হয় জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ, জনগণের স্বার্থের অর্থনীতির বিকাশ, যাতে করে বহুজাতিক করপোরেটের সেবায়েত কালচার ইন্ডাস্ট্রির নিয়ন্ত্রণমুক্ত এমন একটা গণসমাজ তৈরি হতে পারে, যা নিজের ‘সাংস্কৃতিক’ চাহিদা পূরণ করতে নিজের বুঝমতো ‘আর্ট-কালচার’ বিকশিত করতে পারে। দরকার বাজারি মিডিয়ার বৈধতার সংকটকে সামনে আনা। দরকার ‘পপুলার’ সাংস্কৃতিক প্রতিরোধও। তা না হওয়া পর্যন্ত চলবে মিডিওক্রেসির জয়জয়কার। সেটা, শেষ পর্যন্ত কারো জন্যই সুখবর নয়।
সত্যিকথা বলতে কি, বাংলাদেশের পুরা সমাজটাই মিডিওক্রেসিতে আক্রান্ত। সে আলোচনা আরেক দিন। (সূত্র: সাপ্তাহিক বুধবার)