ব্রিটেনের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ সোমবারের
সংখ্যায় বলা হয়েছে- সাবেক ব্রিটিশ সামাজ্য থেকে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রগুলো
নিয়ে গঠিত সংস্থা কমনওয়েলথ থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কারের আশঙ্কা রয়েছে। প্রকাশিত কলামে এ আশঙ্কার কথা লিখেছেন অস্ট্রেলীয়
লেখক নিক স্টেইস। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ভোক্তা অধিকারবিষয়ক সংগঠন চয়েস-এর
প্রধান। এর পূর্বে আরো একটি ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণাধর্মী রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলো। নিক লিখেছেন, ‘কমনওয়েলথভুক্ত সরকার প্রধানদের সম্মেলন আমি প্রত্যেক বারই
প্রত্যক্ষ করি। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই কমনওয়েলথভুক্ত
দেশগুলোর। আমি কেবল ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অতীত নিয়েই ভাবি না, সবার জন্য
একটি সাধারণ ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে যেসব সুযোগ ও উদ্বেগ রয়েছে সে
ব্যাপারেও চিন্তা করি। চিন্তা করি আমি কমনওয়েলথের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে।’ এ লেখায় তিনি কমনওয়েলথকে সংস্কার করারও প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেছেন,
‘সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার পার্থে কমনওয়েলথ সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছে। এতে ৫৪টি
সদস্য রাষ্ট্রের নেতারা দুটি বিষয়ে (থিম) আলোচনা করার সময় পেয়েছেন। বিষয়
দুটি হচ্ছে, নারী ও পরিবতর্ন এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়ন। তবে অনেক দেশে
মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে ও কার্যকর গণতন্ত্র নেই, এগুলো যদি নেতাদের বিব্রত
না করে থাকে, তাহলে আলোচনার বিষয়বস্তু অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এজন্য আপনাকে
খুব বেশি দূর যেতে হবে না, সদস্যদের মধ্যে ১২টি দেশই এখনো জোরপূর্বক বিয়ের
অনুমোদন দেয় এবং ৪১টি দেশেই সমকামিতা অপরাধের শামিল।’ তিনি আরো বলেন ‘বাংলাদেশকে আমি ভালোভাবেই জানি। কমনওয়েলথ সম্মেলনের বিষয়বস্তু দেশটির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’ লেখায়
বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথের তিনজন নারী
সরকারপ্রধানদের অন্যতম (অস্ট্রেলিয়া ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর
সরকারপ্রধান দুজন নারী )। তবে সেই আলোচনায় বাংলাদেশে নারী অধিকার প্রায়
সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিলো।
জাতিসংঘের মতে, বাংলাদেশি নারীদের ৪৭ শতাংশই পারিবারিক
সহিংসতার শিকার। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, গত বছর দেশটিতে ১৮১ জন
নারী এসিড সহিংসতার শিকার রয়েছে।’ ‘কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন
রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর মধ্যে মহামারি
আকারে দুর্নীতির কথা বলতে হয়। ঐতিহাসিকভাবে দেশটির সরকার অস্থিতিশীল। ২০০৯
সালে শেখ হাসিনার দল ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির মুলোৎপাটন করার ঘোষণা
দেওয়া হয়। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় তিনবছর অতিক্রম করলেও দেশটি
দুর্নীতিতে শীর্ষ স্থান দখল করতে যাচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের
দুর্নীতির সূচক (সিপিআই) ও ব্রাইব পেয়ারস ইনডেক্স (বিপিআই) দুই নিরিখেই।’ নিক
স্টেইস বলেন, ‘গত তিন বছরে শেখ হাসিনা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা
খর্ব করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে
দাঁড়িয়েই ‘ন্যায়বিচার’ করছেন। আর গ্রামীণ ব্যাংকের সামাজিক ব্যবসা ধ্বংস ও
দখল করার চেষ্টা করেছেন। দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকায় সম্প্রতি খবর বের হয়েছে,
বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রেই দুর্নীতি বাড়ছে। ফলে এটা মোটেও আশ্চর্যের না
যে, দুর্নীতির কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর নির্মাণের জন্য ২৯০ কোটি
মাকিন ডলার অর্থ সহায়তা স্থগিত করেছে।’ কয়েক বছর ধরে জিম্ববুয়ের
নিষ্ক্রিয়তা ও ফিজিকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে কমনওয়েলথের দুর্বলতা চোখে পড়ে।
সংস্থাটি পরিবর্তনের ব্যাপারে কী প্রভাব রাখতে পারে। অবশ্যই বহিষ্কার
উদ্যোগ একটি বিকল্পপথ। তবে পথনির্দেশ করা ও পরিবর্তনে সমর্থন দেওয়া আরও
কার্যকর হতে পারে। কমনওয়েলথের মূল্যবোধ সব সদস্য রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা
করলে দেখা যাবে, বেশিরভাগ সদস্যই বহিষ্কৃত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও
আছে।