৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কদর বাড়ছে গাধার দুধের!

কথায় কথায় আমরা একে অন্যেকে গাধা বলে মশকরা করি। গাধা প্রকৃতির মানুষ আশেপাশে অনেক থাকলেও চিড়িয়াখানা ছাড়া দেশের কোথাও গাধা নামের প্রাণীটির দেখা মিলবে না। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে দুর্গম এলাকায় গৃহস্থালি পণ্যবহনের অন্যতম মাধ্যম এ প্রাণীর অস্তিত্ব এখন সারা বিশ্বে হুমকির মুখে।

অবশ্য পাশের দেশ ভারতের তামিলনাড়ু, নেপাল ও তিব্বতের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে গাধার দেখা পাওয়া যায়। তামিলনাড়ুর উত্তর তেলাঙ্গানার দুর্গম পাহাড়ে এই প্রাণী যাযাবরদের পণ্যবহন করে থাকে। ওই অঞ্চলে গাধা কেবল পণ্যবহনই করে না, এটি হয়ে ওঠেছে অনেকের উপার্জনের উৎস। কেবল মালপত্র পরিবহন করে গাধার মাধ্যমে আয় হচ্ছে, তা নয়। গাধার দুধ বিক্রি করে হাসি ফুটছে মালিকদের মুখে।

তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরে সুলুরগ্রামে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এই নিরীহ প্রাণীটির দুধ। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ রুপিতে (বাংলাদেশের মুদ্রায় ২৩ হাজার টাকার বেশি)। ওই অঞ্চলের  উচ্চবিত্তদের ধনীদের কাছে গাধার দুধ পান করা হয়ে ওঠেছে অাভিজাত্যের প্রতীক। পাশাপাশি শিশুদের জন্যও মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হিসেবে এই দুধ কিনে থাকেন অনেকে।

ভারতের জি-নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, মাতৃদুগ্ধের যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য আছে, গাধার দুধেও সেইসব উপাদান। গাধার দুধে লিপিডের পরিমাণ ২ শতাংশের নিচে। ফলে গাধার দুধের প্রোটিন ও ফ্যাট সদ্যোজাত ও শিশুদের জন্য খুবই সহজপাচ্য। এমনকি বৃদ্ধদের জন্যও গাধার দুধ খুবই উপকারী।  এছাড়া এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপাদানও। আরো কিছু ওষধি গুণও রয়েছে এই দুধে।
donkey_story_650_122614022350প্রাচীনকাল থেকেই অ্যাজমা-হাঁপানি প্রতিকারে এবং ৬-৮ মাস বয়সী শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গাধার দুধ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্যাঙ্গালুরু এবং চেন্নাই শহরগুলোতেও গাধার দুধের ভালো চাহিদা রয়েছে। ত্বকে মসৃণতা এবং উজ্জ্বলতা আনতেও সাহায্য করে গাধার দুধ। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে গাধার দুধ হয়ে ওঠেছে মহৌষধ।
14vjsub01_Mad_craze_864640eদামি দুধের কারণেই দিন দিন গাধা কদর বাড়ছে। অনেকেই গাধা প্রতিপালনে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। এতে প্রাণীটি বিলুপ্তির ছো্বল থেকে রক্ষা পেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কোথাও গাধার খামার গড়ে ওঠেনি।
তামিলনাড়ুর শেখর নামের এক দুধ বিক্রেতা বলেন, আমার স্ত্রী দুধ দোয়ানোর কাজটি করে। আমি এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে গাধার দুধের ক্যান নিয়ে ঘুরে বেড়াই। পয়সাওয়ালা মানুষরা্‌ তাদের বাচ্চাদের জন্য এই দুধ কিনে থাকে।
তিনি আরো জানান, গাধা দিনে  দুধ দেয় মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার। সেই দুধের ১ কাপ বিক্রি হয় ২০০ রুপিতে। এতে দিনে প্রায় ৫০০ রুপি থেকে ৬০০ রুপি আয় হয়।
শেখর জানিয়েছেন, গাধার বাজার মূল্য এখন বেশ চড়া। একেকটি স্ত্রী গাধা বিক্রি হয় তিন থেকে চার লাখ রুপিতে। তবে পুরুষ গাধার দাম কম, এক লাখ রুপিতেই কিনতে পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয়, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অথবা মিসরে মানুষের গৃহস্থালি পণ্য পরিবহনের কাজে গাধার প্রচলন শুরু হয়। আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে সহজ পরিবহন প্রাণী হিসেবে গাধার খ্যাতি ও ব্যবহার বেড়ে যায়। নিরীহ স্বভাবের জন্য ঘোড়ার মতই মানুষের সঙ্গে সখ্য গাধার।
asian-assদুইশ’ বছর অাগেও বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে গরু-মহিষের সঙ্গে গৃহস্থদের গোয়ালে গাধাও দেখা যেত দু’একটি। কিন্তু এখন আর এই প্রাণীটিকে কোনো গোয়ালে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষের মুখে মুখে প্রাণীটির নাম উচ্চারিত হলেও গাধা এখন বিলুপ্তপ্রায়। দেশের কয়েকটি চিড়িয়াখানা ছাড়া কোথাও গাধা নেই। ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর চিড়িয়াখানায় গেলে গাধার দেখা মিলবে।
ঢাকা চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা মো. শামিম হোসেন জানান, চিড়িয়াখানায় আগের গাধাগুলো বয়সের কারণে মারা যাওয়ায় বছর চারেক আগে অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে নেপাল থেকে ১২টি গাধা অানা হয়। এর মধ্যে দুইটি করে গাধা পাঠানো হয় রাজশাহী ও রংপুর চিড়িয়াখানা। আনার পর পরই একটি গাধার মৃত্যু হয়। বাকি ৭টি ঢাকা চিড়িয়াখানা রাখা হয়। এদের মধ্যে পুরুষ দুইটি ও মেয়ে ৫টি। গতবছর জানুয়ারি ও ডিসেম্বরে দুটি গাধা জন্ম নেয়। সব মিলিয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানায় এখন গাধার সংখ্যা ৯টি।
তিনি আরো জানা, সাধারণত অনুন্নত, দুর্গম এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য গাধা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কাজে ব্যবহৃত গাধার গড় আয়ু ১৫ থেকে ২০ বছর। তবে বিশেষ পরিচর্যায় রাখা হলে একটি গাধা ৩০ খেবে ৪০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। নিরীহ এই প্রাণীটি ভয় পেলে বা ক্ষিপ্ত হলে গলার স্বর বাড়িয়ে বিকট চিৎকার করতে পারে। এতো জোরে যে এই ডাকের শব্দ প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে শোনা যায়। তবে কদাচিত এদের ডাকতে দেখা যায়।
img_0293_assগাধার বৈজ্ঞানিক নাম ইকুয়াস আফ্রিকানাস এশিনাস (Equus africanus asinus)। এর আদি নির্বাস আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে। অনেক প্রাণীর মতোই গাধাও এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বন্য গাধা এখন নেই বললেই চলে। স্তন্যপায়ী এ প্রাণীটি দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মতো, তবে পাগুলো বেশ খাটো। মা গাধা ১১ থেকে ১৪ মাস গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে।
অত্যন্ত নিরীহ গোছের এ প্রাণীর আকার এর গোত্রের ওপর নির্ভর করে। পূর্ণবয়স্ক গাধার দেহের দৈর্ঘ্য মাথাসহ ৬ ফুট এবং ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি। প্রাণীটির গায়ের রঙ সাদা, ধূসর অথবা হালকা ধূসর হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলো,ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মকালে এদের গায়ের রঙ হয় লালচে বাদামি এবং শীতকালে হয় হলুদাভ-বাদামি। গাধার পিঠের মাঝ বরাবর সাদা রঙের উপর কালো দাগ দেখা যায়।