ফয়সাল মাহমুদ পল্লব
শুধু দু'বেলা দু'মুঠো খাবারের জন্য এতো অত্যাচার সইতে হইছে একটা ছোট্ট মেয়েকে? আহা এই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা? এই মানব জনম লয়ে আমরা গর্ব করি? এখন আমাদের নারী নেত্রীরা এই খবরটা লয়ে মিছিল মিটিং করবেন, প্রেস ক্লাব চত্বরে ব্যানার ফেষ্টুন টানায়ে বলবেন বিচার চাই, ববিতার অত্যাচারীদের বিচার চাই। নেত্রীদের লিপিস্টিক পড়া ঠোটের ছবি ছাপা হবে পরদিন পত্রিকায়। ধরা পরবে কিনা এই মিশুটির অত্যাচারী নারী-পুরুষটি? কি বিচার হবে? টাকা থাকলে বিচার? আহা বিচার? সোমাটেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে চাকরী করেন যে ববিতার অত্যাচারী ঐ লোকটা। সোমাটেক কোম্পানী এই লোকটারে চাকরীতে রাখবেই। আর ববিতার অত্যাচারী মহিলা মান-সন্মানের ভয়ে গা-ঢাকা দিবে। আর ববিতা কাতরাবে হাসপাতালের বিছানায়। ঘা শুকাতে কষ্ট হবে তো শুধু ববিতার। ঐ ঘায়ের ব্যথা আর কারো না যে, ওই ব্যথা শুধু ববিতার জন্য বরাদ্দ। আর গরীব মানুষের মেয়ে যে ববিতা, (গরীব মানুষদের গায়ে তো ব্যথা লাগে না) পরের বাড়ী ঝিয়ের কাজ করে যে ববিতা, তাই ববিতা মানুষ না, ওতো কাজের মাইয়া/বেটি। আহা নারী নেত্রী এলিনা খান, এই ভাবে নারী নারীর শরীরে ব্যথা দিতে পারে? এই নারীদের বিচার কইরা একটা পুরুস্কার টুরুস্কার বিদেশ থেকে আনোন যায় কিনা দেখেন। আফসোস কত দিন ববিতাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে? আহা আর কত দিন এলিনা খান লিপিস্টিক পরা ঠোটে বলবেন.....'নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে'???
বিস্তারিত সংবাদ:
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আবুরি গ্রামের ১০ বছরের দরিদ্র শিশু ববিতা। তিন বেলা পেট ভরে খাবারের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে_এই আশায় মা-বাবার আশ্রয় ছেড়ে সে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিল কাজের মেয়ে হিসেবে। কিন্তু দিনের পর দিন গৃহকর্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতনে এখন তার আর পেট ভরে খাবার নয়, বেঁচে থাকার আশাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরম খুন্তির ছেঁকা ও মারধরের কারণে শরীরে অসংখ্য দগদগে ঘা নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ববিতা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। শিশুটির ওপর নির্যাতনের মাত্রা দেখে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরাও শিউরে উঠছেন।
জানা যায়, ওষুধ কম্পানি সোমাটেকের নির্বাহী ডিস্ট্রিবিউটর কুষ্টিয়ার লাহিনী এলাকার শাহিন আহমেদ দুই বছর আগে তাঁর বাসায় কাজের জন্য একই জেলার আবুরি গ্রামের ববিতাকে ঢাকায় নিতে তার বাবা জহুরুল ইসলামের কাছে যান। অভাবের সংসার ঠিকমতো চলে না, তিন বেলা ঠিকমতো অন্ন জোটে না_এই চিন্তায় ববিতাকে কাজের মেয়ে হিসেবে ঢাকায় দিতে রাজি হন জহুরুল। পরে শাহীন আহমেদ তাকে ঢাকার ১৭২/এ পূর্ব কাফরুলের চারতলার বাসায় নিয়ে আসেন। কিন্তু ঢাকায় এসেই শাহীনের স্ত্রী সুমির নির্যাতনের মুখে পড়ে ববিতা। ববিতার অভিযোগ, উগ্র মেজাজি এই গৃহকর্ত্রী কথায় কথায় তার ওপর নির্যাতন চালান। শাহীনও অংশ নেন এই নির্যাতনে। দিনের পর দিন আটকে রেখে শাহিন ও তাঁর স্ত্রী সুমি ববিতাকে আগুনের ছেঁকা ও লাঠিপেটা করতে থাকেন। মাসের পর মাস নির্যাতনের শিকার হয়ে একপর্যায়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে ববিতা।
বিষয়টি জানতে পেরে ববিতার বাবা জহুরুল ইসলাম কয়েক দিন আগে ঢাকায় ছুটে যান। সেখান থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে তিনি তাকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন। এর আগে জহুরুল ইসলাম কাফরুল থানায় বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে থানার উপপরিদর্শক এসআই মোশারফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সবাইকে থানায় ডেকে নেন। পরে কাফরুল থানায় এ ব্যাপারে একটি জিডি করা হয়, নম্বর ১০০৭, তারিখ ১৩-১১-২০১০।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই মোশারফ কালের কণ্ঠকে জানান, শাহিন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি ববিতার বাবা ও তিনজন সাক্ষীর সামনে ববিতার সব চিকিৎসা খরচ বহন করবেন বলে থানায় একটি অঙ্গীকারনামাও দেন। এরপর ববিতার বাবা গত ১০ নভেম্বর রাতে ববিতাকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যান। লোক জানাজানির ভয়ে শাহিন গোপনে প্রথমে ববিতাকে কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে মেয়েটি হাসপাতালের ১ নম্বর কেবিনে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। গতকাল রবিবারও তার শরীরের ক্ষতে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এই ঘটনায় কাফরুল থানায় অঙ্গীকারনামার সাক্ষী শাহিনের প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রাসেল আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'থানার পুলিশ বিষয়টি জানে। থানার এসআইয়ের অনুরোধে আমি সাক্ষী হয়েছি।'
হাসপাতালে ববিতা কালের কণ্ঠকে জানায়, আস্তে কাজ করলে বা কাজে দেরি হলে গৃহকর্ত্রী সুমি তাকে গরম খুন্তি দিয়ে নির্যাতন করত। এদিকে গৃহকর্তা শাহিনের ভয়ে ববিতার অসহায় বাবা জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানান। পরে তাঁকে অভয় দেওয়ার পর তিনি জানান, নির্যাতনের বিষয়টি যাতে পত্রপত্রিকায় না ওঠে সে জন্য নির্যাতনকারী শাহিন নানা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। জহুরুল তাঁর মেয়েকে নির্যাতনের শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে গৃহকর্তা শাহিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অনেক বলেছি, এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারব না। লিখে আর কী হবে। যা হওয়ার তা তো হয়েছেই।' (বিস্তারিত সংবাদ: কালের কন্ঠের)