নরওয়ের সরকারি টিভি চ্যানেল এনআরকেতে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে, সাংবাদিক হারাল্ড এরাকার এ প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। বাংলাদেশে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা গ্রামীণ মহিলাদের ভাগ্য ফিরিয়েছে গ্রামীণফোনের পল্লীফোন প্রকল্প এর গল্প। সুবিধাভোগী সেই নারীদের কোথাও খোঁজ মিলছে না। এরাকারের প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়, গ্রামীণফোন কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৫০ হাজার গ্রামে ২ লাখ ৭০ হাজার নারীর মধ্যে এই ফোন সরবরাহ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে তার নোবেল বক্তৃতায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রামে ৩ লাখ মহিলা এখন ফোন ব্যবসা করছে। অথচ জরিপে দেখা যাচ্ছে ওইসব গ্রামে একজন গ্রাহকেরও অস্তিত্ব নেই। ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে ফোন কোম্পানি টেলিনর এবং গ্রামীণফোনের স্বত্বাধিকারী গ্রামীণ টেলিকমের পল্লীফোন প্রকল্পে গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৮১ হাজার। কিন্তু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা হলো নিয়মিত গ্রাহকদের কাছে বিক্রিত সিম কার্ডের সংখ্যা। গ্রামীণ ফোনের এসব গ্রাহকের মধ্যে সেই পল্লী দরিদ্র মহিলাদের একজনও নেই। টেলিনরের তথ্য ব্যবস্থাপক এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জানান, নাটকীয়ভাবে এ প্রকল্পের গ্রাহক সংখ্যা কমে গেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ১ ডিসেম্বর ডেনমার্কের সাংবাদিক টম হাইনেমার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের নামে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজস্ব একটি ফান্ডে সরিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পল্লীফোনের প্রকল্পটি এখনো চালু আছে তবে দারিদ্র্য হ্রাসে তা মোটেও কাজে আসছে না বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
এ বছরে জুনের দিকে প্রকাশিত গ্রামীণ টেলিকমের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাজহারুল হান্নান তার লেখা ‘হোয়াই ডাজনট মাইক্রোফিনান্স ওয়ার্ক’ বইয়ে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
প্রফেসর ইউনূস এ অভিনব প্রকল্পের প্রস্তাব ঢাকায় নরওয়ে অ্যামবেসিতে পাঠান যা ১৯৯৪ সালে ৭ নভেম্বর নোরাডের কাছে পাঠানো হয়।
এরপর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ নরওয়ের টেলিকম কোম্পানি টেলিনর ৫৫.৮ শতাংশ এবং গ্রামীণ টেলিকম ৩৪.২ শতাংশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। গ্রামীণফোন নামে এটি একটি অলাভজনক কারবার যেটি বাংলাদেশে গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের মধ্যে কাজ করবে বলে ওই প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেন তিনি। অথচ ব্যবসা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামীণফোন সবচেয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়। টেলিনরের হিসাব অনুযায়ী গত ৮ বছরে গ্রামীণফোন তাদের লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছে ৮৫৫ মিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ডলার। (সূত্র: অনলাইন)