প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের  সভাপতিত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লিভ টু আপিলের  আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।  রিট খারিজ করে দেয়ায় হাইকোর্টের আদেশের  বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আপিলের অনুমতি মিলেনি।  এর ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের  পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি  বহাল রইলো। 
 শুনানিতে অংশ নিয়ে ইউনূসের আইনজীবী ড. কামাল হোসেন রিট খারিজ হওয়াকে আইনগত  ভ্রান্তিমূলক আদেশ বলে উল্লেখ করেছেন বলেন, কোনো ধরনের রুল ইস্যু না করেই  হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। বিষয়টিকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে  তিনি আরো বলেন, নিয়ম অনুসারে রুল জারি করা হয় এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা  হয়। এক্ষেত্রে আমাদের অপর পক্ষের বক্তব্য শোনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। 
 তিনি বলেন, হাইকোর্ট এটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদেশ দিয়েছেন।  কিন্তু এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়নি, যা  আদালতের জন্য অত্যাবশ্যক। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া তিনটি রায়কে নজির  হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ক্ষেত্রে আইনের প্রশ্ন জড়িত সেখানে রুল না  দিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করা যায় না। রিটে আইনের অনেক ব্যখ্যা জড়িত তাই রিট  সরাসরি খারিজের আবেদন আইন সম্মত হয়নি। কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অব্যাহতির চিঠি দেয়াকে 'প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল  জাস্টিজের ভায়োলেশন' বলে ড. কামাল মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে  অপসারণ করে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি বিধিবহির্ভূত। গ্রামীণ ব্যাংকের  ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করার এখতিয়ার একমাত্র এর  পরিচালনা পর্ষদের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। তাছাড়া ১১ বছর আগে ইউনূস এ পদে  থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই বাংলাদেশ ব্যাংকের  পক্ষ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট করা হয়েছে। কিন্তু কখনোই এ বিষয়ে কোনো  আপত্তি উত্থাপন করা হয়নি। চিঠিতে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ড.  কামাল বলেন, ১১ বছর পর একজন জেনারেল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়  "আপনি (ইউনূস) নন"। 
 তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালের গ্রামীণব্যাংকের চাকরি বিধিমালা কেবল কর্মীদের  জন্য প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ কর্মীর সংজ্ঞাভুক্ত নয়। এ পদের  নিয়োগ দেয় পরিচালনা পর্ষদ আর কর্মী নিয়োগ দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চাকরি  বিধিমালায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বলেও  জানান তিনি। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে অবসরের ৬০ বছরের সময়সীমা কর্মীদের জন্য  প্রযোজ্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য নয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কেউ নোবেল বিজয়ী হলেই  তার জন্য সবকিছু আনলিমিটেড হয়ে যায় না। আদালতে ইউনূসের পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল ইসলাম ও  তানিম হোসাইন আর রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং বাংলাদেশ  ব্যাংকের পক্ষে তৌফিক নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
 সোমবার ইউনূসের আবেদনটি শুনানির জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু কার্যতালিকায়  না থাকায় আবেদনকারীর আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। এ  পর্যায়ে আদালত মঙ্গলবার শুনানির জন্য ধার্য করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ায় গত ২৯ মার্চ শুনানি ৪  এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছিল। গত ২৮ মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ  আদেশের কপি প্রকাশ করা হয়। সার্টিফাইড কপি পাওয়ায় গত রোববার বিকেলে দুটি  লিভ টু আপিল করা হয়।  প্রসঙ্গত, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. মুহাম্মদ  ইউনূসকে অব্যাহতি প্রদান করে  বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক দুটি রিট  আবেদন হাইকোর্ট ৮ মার্চ খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে  আপিল বিভাগে ৯ মার্চ দুটি আবেদন (সিএমপি) করা হয়। ওইদিন দুপুরে চেম্বার  বিচারপতির আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। শুনানির পর চেম্বার বিচারপতি  সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আবেদন দুটি ১৫ মার্চ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত  বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। তবে আদেশের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ায় ১৫ মার্চ শুনানি  দুই সপ্তাহ মুলতবি করা হয়। (সূত্র: অনলাইন)
