১০ এপ্রিল, ২০১১

কাদের সিদ্দিকীর বয়ান

দিগন্ত টিভির টকশো ‘নিউজ অব দ্য ডে’ তে গত ১৯শে মার্চ আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম। তার দেয়া সাক্ষাতকারের কিছু অংশ উপস্থাপিত হলো।
উপস্থাপক: সম্প্রতি আপনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন, জিয়াউর রহমান-ই স্বাধীনতার ঘোষক। এই বিষয়টি নিয়ে এখন বিভিন্ন ফোরাম থেকে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হচ্ছে। আপনার কাছ থেকে আমরা এই বিষয়টি পূর্ণাঙ্গরূপে জানতে চাই।
কাদের সিদ্দিকী: আসলে সত্যিই কি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক? স্বাধীনতা বড় না স্বাধীনতার ঘোষণা বড়? বাংলাদেশ বড় না স্বাধীনতা বড়? আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু হচ্ছে স্বাধীনতা ঘোষণার জনক, যার জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল। একমাত্র জিয়াউর রহমান-ই স্বাধীনতার ঘোষক এ কথাটা আমি কখনো বলি নাই। আমি বলবার চেষ্টা করেছি যে বঙ্গবন্ধুর হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের পরে অনেক নেতাই দিয়েছেন। অনেকেই দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর একজন সদস্য হিসাবে সেই সময় মেজর জিয়াউর রহমানও চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণাটি পাঠ করেছিলেন। মেজর জিয়া বলেছিলেন, “I, Major Zia do hereby declare Independence of Bangladesh on behalf of our great National Leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman”. ওইখানে our great National Leader না বলে Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahmanও বলা যেতে পারতো। ওইখানে যদি on behalf of our great National Leader হয় তাহলে ঘোষণাটি তিনি বঙ্গবন্ধুর নামেই দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নামে জিয়াউর রহমানের ঘোষণাকে আমি একশত ভাগ সমর্থন করি। আমি বলেছি যে জিয়াউর রহমান যেহেতু সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং যেহেতু তখন যুদ্ধবিগ্রহ চলছিলো, সেহেতু সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হিসাবে তিনি যখন বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষণা দিয়েছেন তখন মানুষ উৎসাহিত হয়েছে ও উজ্জীবিত হয়েছে। আমি কাদের সিদ্দিকী কিন্তু জিয়াউর রহমানের ঘোষণায় যুদ্ধে যাই নাই। জিয়াউর রহমান যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অনেক আগেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছি এবং যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছি। আমি কাদের সিদ্দিকী যখন জিয়াউর রহমানের এই ঘোষণার কথা শুনেছিলাম, আমি নিজেও উৎসাহবোধ করেছিলাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যুদ্ধকালীন সময়ে অনেকবার জিয়াউর রহমানের এই ঘোষণা বার বার প্রচার করা হয়েছে। এইজন্য প্রচার করা হয়েছে কারণ এই ঘোষণাতে তখন মানুষ উৎসাহিত হয়েছে। বাবা বড় না সন্তান বড় এটা যদি বাঙালীকে বোঝানো না যায় তাহলে সেটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার। প্রতিটি বাবা চীরকালই তার সন্তানের চাইতে বড়। সেইক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষকের চাইতে স্বাধীনতার জনক অনেক বড়, স্বাধীনতার ঘোষকের চাইতে স্বাধীনতা অনেক বড়, স্বাধীনতার চাইতে বাংলাদেশ অনেক বড়। আমি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষকের স্থানে আনতে চাইনা। যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চাইতেন তারা আজকে বঙ্গবন্ধুর অনেক প্রিয় পাত্র সেজে বঙ্গবন্ধুকে বড় করার চাইতে বঙ্গবন্ধুকে ছোট-ই করতে চেষ্টা করেছেন। প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের নেতা এবং আমরা সকলেই উনার ছায়া। আর সেই ছায়া হিসাবে জিয়াউর রহমানও একজন অন্যতম প্রধান। (সূত্র: অনলাইন)