আজ কবি শামসুর রাহমানের ৮২তম
জন্মবার্ষিকী। ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরানো ঢাকার মাহুতটুলির ৪৬নং বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন কবি শামসুর রাহমান। বাংলা
কবিতার নতুন ধারার কবি, মুক্তিযুদ্ধের কবি, বাংলাদেশের মানুষের কবি, চেতনার কবি শামসুর রাহমান। ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর অবসরে
রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের গল্পগুলো পড়ে নেন শামসুর রাহমান। তখনই আরো পড়ে নেন বঙ্কিম ও শরৎ চন্দ্রের রচনা। ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি সোনার বাংলায় শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতা
ছাপা হয়। সেই কবিতার নাম 'তারপর দে ছুট' । ১৯৪৭ সালে আইএ পাশ করার পর ভর্তি
হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। স্নাতক সম্মান পড়া শেষ বছর পর্যন্ত
চালিয়ে গেলেও পরীক্ষায় অবতীর্ণ হননি। ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে স্নাতক পাশ
করেন। মাস্টার্স ভর্তি হয়ে প্রথম পর্ব কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন কবি। ১৯৫৫ সালের ৮ জুলাই জোহরা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কবি দম্পতির পাঁচ
সন্তান (তিন কন্যা ও দুই পুত্র)। তারা হলেন যথাক্রমে সুমায়রা রাহমান,
ফাইয়াজুর রাহমান, ফৌজিয়া রাহমান, ওয়াহিদুর রাহমান মতিন এবং সেবা রাহমান। ১৯৫৭
সালে কবি কর্মজীবন শুরু করেন মর্নিং নিউজ-এর সহ-সম্পাদক হিসেবে।
১৯৫৮ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন রেডিও
পাকিস্তান-এর ঢাকা কেন্দ্রে। পরে আবার ফিরে আসেন ঊর্ধ্বতন সহ-সম্পাদক
হিসেবে মর্নিং নিউজ পত্রিকায়। মর্নিং নিউজ-এ ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত কাজ
করেন। ১৯৬৪ সালে পত্রিকা জগতে নতুন আসা সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলা পত্রিকা
দৈনিক পাকিস্তান -এ (পরে ‘দৈনিক বাংলা’) যোগ দেন সহকারী সম্পাদক
হিসেবে। দীর্ঘ ১৩ বছর কাজ করার পর ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দৈনিক
বাংলা এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭
সালে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন
কবি। সাংবাদিকতার
বাইরে তিনি প্রথম সম্পাদনা করেন লিটল ম্যাগাজিন 'কবিকণ্ঠ' । ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমীর সভাপতি নিযুক্ত
হন কবি। শামসুর
রাহমানের গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বিভিন্ন ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে।
১৯৭৫ সালে কলকাতা থেকে কবীর চৌধুরীর অনুবাদে প্রকাশিত হয় শামসুর রাহমান:
সিলেকটেড পোয়েমস । কবিতার বাইরেও বিভিন্ন সময়ে তাঁর রচিত শিশুসাহিত্য,
অনুবাদ, গল্প, উপন্যাস, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গদ্য নিয়ে বহু গ্রন্থ
প্রকাশিত হয়েছে। বেশকিছু জনপ্রিয় গানের গীতিকারও তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য
কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৬০), রৌদ্র
করোটিতে (১৯৬৩), বিধ্বস্ত নীলিমা (১৯৬৭), নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৮), নিজ
বাসভূমে (১৯৭০), বন্দি শিবির থেকে (১৯৭২), ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা (১৯৭৪),
আমি অনাহারী (১৯৭৬), শূন্যতায় তুমি শোকসভা (১৯৭৭), বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে
(১৯৭৭), প্রেমের কবিতা (১৯৮১), ইকারুসের আকাশ (১৯৮২), উদ্ভট উটের পিঠে
চলেছে স্বদেশ (১৯৮২), বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় (১৯৮৮), হরিণের হাড় (১৯৯৩),
তুমিই নিঃশ্বাস, তুমিই হৃদস্পন্দন (১৯৯৬), হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল (১৯৯৭)।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা, শামসুর
রাহমানের নির্বাচিত কবিতা ও শামসুর রাহমানের রাজনৈতিক কবিতা। কবি শামসুর রাহমান অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ
করেছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে: ‘আদমজী পুরস্কার’ (১৯৬৩),
‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ (১৯৬৯), ‘একুশে পদক’ (১৯৭৭), ‘স্বাধীনতা
পুরস্কার’ (১৯৯১), সাংবাদিকতায় ‘জাপানের মিত্সুবিশি পদক’ (১৯৯২), ভারতের
‘আনন্দ পুরস্কার’ (১৯৯৪)। এছাড়া ভারতের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে
সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদান করেছে। ২০০৬ সালের ১৭ আগষ্ট কবি শামসুর রাহমান এই পৃথিবী থেকে
চিরবিদায় নেন। (সূত্র: অনলাইন)