২৮ নভেম্বর, ২০১১

সাংবাদিক এবিএম মূসার নামে সড়ক

সাংবাদিক এবিএম মূসার নামে সড়ক হচ্ছে রাজধানীতে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তোপখানা রোডটি শ্রদ্ধেয় এ সাংবাদিকের নামে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এসংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার সাংবাদিক মনির হায়দার বাংলানিউজকে এটি নিশ্চিত করেছেন। রোববার তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এদিনই এটি অনুমোদন দেন। একই সঙ্গে মেয়র বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য পাঠান। মনির হায়দার বলেন, ‘আমাদের দেশে যে কোনো কৃতী ব্যক্তিকে মরণোত্তর স্বীকৃতি দেওয়ার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। সাধারণত জীবদ্দশায় কীর্তিমানরা তেমন কোনো স্বীকৃতি পান না। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার।’ এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আবেদনপত্রটি আমাদের বিভাগে এসেছে। এটি উপকমিটি ও বোর্ড মিটিংয়ে উত্থাপন ও অনুমোদন হবে। প্রক্রিয়াটি একটু দীর্ঘ। হয়ত দুই-তিন মাস লেগে যাবে।’ সিটি কর্পোরেশন মেয়র চলে গেলে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। মেয়র পরিবর্তন হলে কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘সফল ব্যক্তিদের নানাভাবে স্বীকৃতি ও সম্মাননা দিলে নতুনরা ভালো কাজ করার উৎসাহ পাবেন। একটি কথা প্রচলিত আছে, যে সমাজে গুণীর কদর নেই, সে সমাজে গুণীজন জন্মায় না।’ এসব কারণে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত সাংবাদিক এবিএম মূসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি দেশের প্রথম শ্রেণীর সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এবিএম মূসা জাতীয় প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য। গত ফেব্রুয়ারিতে তার ৮০তম জন্মদিন পালন করা হয়। এবিএম মূসার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ পত্রিকার মধ্য দিয়ে। একই বছর তিনি যোগ দেন ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অবজারভার পত্রিকায় রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভাষা আন্দোলনের সময়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দিলে এবিএম মূসা দৈনিক সংবাদে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে আবার অবজারভারে ফিরে আসেন। এই সাংবাদিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ পাঠাতেন। যুদ্ধের পর  বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মহাব্যবস্থাপক ও ডেইলি মর্নিং নিউজ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৮ সালে ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন এবিএম মূসা। দেশে ফিরে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ সাল থেকে পরবর্তী দুই বছর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবিএম মূসা যুগান্তরের সম্পাদক হিসেবে ২০০৪ সালে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে কলাম লেখক এবিএম মূসা দর্শকপ্রিয় আলোচক এবং সংবাদ বিশ্লেষক হিসেবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নেন।

এবিএম মূসা জাতীয় প্রেসক্লাবের চারবার সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।