নির্ধারিত বয়সের বেশি সময় পার করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার সকালে মিরপুরে তার বাসায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান৷ যদিও সম্পাদক পদমর্যাদার মাত্র দুই জন সময়মতো এবং একজন অনেক পরে সেখানে উপস্থিত হন৷ অন্যরা না যাওয়ায় তারা অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়েন৷ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সদ্যবিলুপ্ত বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী তার অস্বস্তির কথাই জানান৷ ড. ইউনূসকে আদালতের রায় মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান ইকবাল সোবহান চৌধুরী৷ এদিকে, পুরো বিষয়টি নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষও খোলাসা করে কিছু বলছে না৷ সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সঙ্গে এ বৈঠক প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের গণমাধ্যম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জান্নাত-ই-কাওনাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি কিছু জানি না৷ আপনি বিশ্বাস করেন, আমি বাসাতেই আছি৷ জান্নাত আরও বলেন, 'যদি এমন কিছু হয়েও থাকে, তবে তা তো আপনাদের না জানলেও চলবে, তাই না!' গ্রামীণ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ইউনূসের বাসায় বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'আমি গিয়েতো অবাক৷ আমি সেখানে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত৷ গিয়েছিলাম সোয়া এগারোটার দিকে৷ এগারোটায় শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ তিনি বলেন, আমার আগে গিয়াস কামাল চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হন৷ অনেক পরে আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও তার সঙ্গে ওই পত্রিকাটির উপ-সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ সেখানে যান৷ ইকবাল সোবহান আরও বলেন, 'আমি শুনেছিলাম আমাদের শ্রদ্ধেয় এবিএম মুসা ভাই, আতাউস সামাদসহ কয়েকজন যাচ্ছেন৷ কিন্তু কেউ নেই!' ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমাকে তো মতবিনিময় অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়৷ আরও বলা হয়, বেশ কয়েকজন সম্পাদকও সেখানে যাবেন৷ আমি ভেবেছিলাম, এটি অন্য দশটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মতোই হবে৷ কিন্তু পুরো সময়টাতে তিনি ছাড়া আর তিনজন সেখানে উপস্থিত হন৷ এদের মধ্যে একজন আবার এসেছিলেন অন্যজনের সঙ্গে! ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'আমি ইউনূস সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম, অন্যরা কেউ আসছে না কেন? এর জবাবে অবশ্য তিনি (ইউনূস) কিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন৷ তিনি আরও বলেন, 'মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি ওপেন মিডিয়া কাভারেজ হওয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু তা হয়নি৷ ইকবাল সোবহান বলেন, 'দেখুন, আমার ও গিয়াস কামাল চৌধুরীর সেখানে উপস্থিত হওয়ার মানে হয়তো মনে হতে পারে, দুই পক্ষের দুইজন সেখানে গিয়েছি৷' তিনি বলেন, 'আসলে বিষয়টি সেরকম নয়৷ আমি তো কোনো পক্ষ নই৷' মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আলোচ্যসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সেখানে তো মতবিনিময়ের মতো কোনো অনুষ্ঠানই হয়নি৷ তিনি বলেন, 'ইউনূস সাহেব বলছিলেন, তিনি না থাকলে গ্রামীণ ব্যাংকের কী হবে, এ ধরণের কিছু কথাবার্তা৷ আমি তাকে বলেছি, কথাগুলো আপনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়কে জানান৷ ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, 'আমি তাকে বলেছি, আপনিই তো আদালতে গেছেন৷ এখন আদালত যা রায় দিয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থে, আপনার নোবেল পদকের স্বার্থে তা মেনে নিন৷ 'ড. ইউনূস সম্ভবত আইনী প্রক্রিয়ার শেষ পর্যন্ত দেখতে চাইছেন', মন্তব্য ইকবাল সোবহানের৷ ইকবাল সোবহান বলেন, কিছু সময় পর আমি বললাম, নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে, আমি চলি৷ এদিকে, ইউনূসের বাসায় যাওয়া প্রসঙ্গে দৈনিক আমার দেশ উপ-সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, 'আসলে আমরা গিয়েছিলাম ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে৷ আমাদের সম্পাদক মাহমদুর রহমানের কারা মুক্তির পর দেখা করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য৷' তিনি আরও বলেন, 'গ্রামীণ ব্যাংক বা ইউনূসের এমডি থাকা না থাকা-- এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলিনি৷ ইউনূসের বাসা থেকে বেরিয়ে মাহমুদুর রহমান গেটের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, 'মতবিনিময়কালে ড. ইউনূস বলেছেন তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল৷ এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, 'ইউনূসের প্রতি আমার কোনো পরামর্শ নেই৷ প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল এগারোটায় ইউনূস কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদককে তার বাসায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানের নামে আমন্ত্রণ জানান৷ (সূত্র: কমিউনিটি অনলাইন)