মুখের লাল, বাদামী বা গাঢ় বাদামী বর্ণের দাগকে ছুলি
বলে। ছুলি স্বাস্থ্যগত কোন ঝুঁকির কারণ না হলেও আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
ফর্সা মানুষদের জন্য এটি বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছুলি পাতলা,
চ্যাপ্টা ও গোলাকার হয় এবং দেহের উপরের অংশে যেমন- বাহু, কাঁধ, নাক ও গালে
হয়। ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যায় বলে ছুলি হয়। মেলানিন বৃদ্ধি পাওয়ার
কারণ গুলো হচ্ছে- সূর্যরশ্মি, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ও বংশানুক্রম ইত্যাদি।
ছুলি দূর করার অনেক আধুনিক চিকিৎসা আছে যেমন- ব্লিচিং, রেটিনয়েডস,
কেমিক্যাল পিল, লেজার ও ক্রায়োসার্জারি ইত্যাদি। তবে এগুলো বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের দ্বারা করাতে হয় এবং ব্যায়বহুল ও বটে। রাসায়নিক কোন চিকিৎসা
নেয়ার ফলে ত্বকের অন্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক কিছু
উপায় আছে যা ছুলি নিরাময়ে আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকরী। কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি
আছে যা ছুলিকে হালকা করে আর কিছু আছে পুরোপুরি দূর করতে পারে। ছুলি দূর
করার জন্য রাসায়নিক কিছু ব্যবহার অথবা সার্জারি করার পূর্বে অন্তত একবার
হলেও প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখুন। আসুন তাহলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি
সম্পর্কে জেনে নেই এবার।
১। টমেটো জুস
একটি বড় ও পাকা টমেটো নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর এটিকে ভালো করে ম্যাশ করে নিয়ে ছুলিতে আক্রান্ত স্থানে লাগান। হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন যেনো রোমকূপ দিয়ে রস ভালোভাবে প্রবেশ
করে। ১৫-২০ মিনিট এভাবে রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি
ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত সাবান ব্যবহার করবেন না। দুই সপ্তাহ যাবত
দিনে দুই বার এটি ব্যবহার করুন। দুই সপ্তাহ পরে আপনার ছুলি অনেকটাই হালকা
হয়ে আসবে এবং আপনার ত্বক উজ্জল ও টানটান হবে।
২। টক দুধ
যদি জেনেটিক কারণে না হয় তাহলে টক দুধের মাধ্যমে
ছুলির সমস্যা দূর করা যায়। দুধের ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করতে
চমৎকারভাবে কাজ করে। টাইরোসিনেজ নামক এনজাইম শরীরে মেলানিন ও অন্যান্য রঞ্জক উৎপাদনের জন্য দায়ি।
ল্যাক্টিক অ্যাসিড টাইরোসিনেজ এনজাইমের অতিরিক্ত উৎপাদনকে বাধা প্রদান করে
এবং এর ফলে ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশনকে রোধ করে। হাইপারপিগমেন্টেশনের একটি
প্রকার হচ্ছে ছুলি। ৩চা চামচ টক দুধ নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে মুখে
লাগান এবং ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩-৪
বার এটি ব্যবহার করুন। যদি আপনার ত্বক তৈলাক্ত হয় অথবা ব্রণ থাকে তাহলে টক
দুধের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। দইও ল্যাক্টিক
অ্যাসিডের ভালো উৎস।
৩। লেবুর রস
ছুলি বা বাদামী দাগ দূরীকরণে লেবুর রস অত্যন্ত
কার্যকরী। লেবুর রসে চামড়ার রঙ হালকা করার উপাদান আছে যা ত্বকের গাঢ় দাগ
দূর করে ব্লিচের মাদ্ধমে। লেবুর রস চিপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ভালো
ভাবে ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন দুইবার এটি করুন। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে লেবুর স্ক্রাব। একটি লেবুর
অর্ধেকটা অংশ কেটে নিয়ে তার উপর আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে নিন। তারপর এটি
আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন। কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করার পর
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে এক বা দুই সপ্তাহ নিয়মিত করুন।
৪। পেঁয়াজ
পেঁয়াজে এক্সফলিয়েটিভ উপাদান আছে যা ছুলি বা বাদামী দাগ দূর করতে পারে।
ভালো ফল পাওয়ার জন্য লাল পেঁয়াজ ব্যবহার করুন। একটি লাল পেঁয়াজ মোটা করে
কেটে নিয়ে ছুলিতে আক্রান্ত স্থানে দিনে দুই বার আস্তে আস্তে ঘষুন। যতদিন
পর্যন্ত না ছুলি ফ্যাকাশে হয় ততদিন এটি ব্যবহার করুন।
৫। ভেজিটেবল ফেস মাস্ক
দুই টুকরো শশা ও দুই টুকরো স্ট্রবেরি নিয়ে ভালোভাবে
ম্যাশ করে নিন। এবার এর সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। সবজির এই মাস্কটি
ছুলির উপরে লাগিয়ে বাতাসে শুকাতে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ছুলি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এবং ত্বকের টোন উন্নত করার জন্য সপ্তাহে চারবার
এটি ব্যবহার করুন।
এছাড়াও সাওয়ার ক্রিম, মধু, কমলার খোসা, জোজোবা তেল,
হলুদ, ভিটামিন ই অয়েল, বাটার মিল্ক, পেঁপে, বেগুন, সজনে, আমন্ড তেল এবং কলা
ও পুদিনার ফেস মাস্ক ছুলি দূর করার কাজে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।